ব্রাত্য বসু নিজের দফতরেই ব্রাত্য। বুক ফুলিয়ে ‘বেপরোয়া’ মন্তব্য করে এবার ফেঁসে গেলেন তিনি। তিনি কবীর সুমনের মতো ঠোঁট কাটা লোক হলে এতক্ষণে অনেক কিছু বলে ফেলতে পারতেন। তিনি কিছু পাওয়ার লোভেই তৃণমূল দলে যোগ দিয়েছিলেন। অনেক কিছু পেয়েছেন। সংস্কৃতিময় রাজ্যটির তিনি শিক্ষামন্ত্রী। নাটক করে এত ক্ষমতা রোজগার হতনা। শিক্ষকতা করেও হতনা। ক্ষমতার লোভ বড় লোভ। তাই অপমানিত হয়েও তিনি টিকে থাকতে চাইছেন। আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর মুখে কুলুপ এঁটে দিল পুলিশ! সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে ব্রাত্য করে রেখে দিল তাঁদের সরকারের পুলিশ।
কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বেজায় ধমক দিয়েছেন। তিনি মন্ত্রী হতে পারেন কিন্তু রাজ্যে নিদেনপক্ষে তাঁর মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাঁকে তাঁর দিদির আদেশ পালন করার উপদেশ মাথায় রাখতে হবে। নইলে তিনি সরে যেতে পারেন। দরজা খোলা আছে। ব্রাত্য বসু ক্ষমতালোভী নাট্যপুরুষ। বকুনি খেয়ে নিঃশব্দে তা হজম করে গুটিপায়ে মহাকরণ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করবে বলে ওঁত পেতে বসেছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশপক্ষ। ‘দিদির আদেশ’ আছে তিনি যেন সাংবাদিককের কাছে কোন কথা না বলেন। আপত্তি না থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের কাছ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করল পুলিশ বকলমে মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে রাজ্য সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইলেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর এত বড় অপমান রাজ্যের শিক্ষাবিদদেরও অপমান। শিক্ষাজীবিদেরও অপমান। সংস্কৃতির অপমান। মানুষের অপমান।
ক্ষমতালোভী মানুষেরা এই ঘটনাকে অপমানের সূচক হিসেবে দেখেনা। তাই ব্রাত্য বসুও ব্যাপারটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। আঠাশে ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের জের এখনো থামেনি। ‘নির্দেশ’ ছিল ধর্মঘটে যোগ দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও ধর্মঘটে যোগ দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধ করার জন্যে ধর্মঘট করা যেতেই পারে। আইন বলছে। সরকারী কর্মচারীরাও আগাম নোটিশ দিয়ে ধর্মঘট করলে তা নিয়মবিরুদ্ধ নয়। এই ‘নির্দেশ’ কে তোয়াক্কা না করে অনেকে ধর্মঘট করে ফেলেছেন। অনেকে ভয় পেয়ে অফিস করেছেন। অনেকে আবার রাতে অফিস থেকে বাড়ি না ফিরে ধর্মঘটের দিন অফিস কামাই না করার জন্যে বিনে পয়সায় ‘ওভারটাইম’ খেটেছেন। ধর্মঘটের বিরোধিতা করলে শিল্পপতিরা নাকি আকৃষ্ট হবেন। রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনা বাড়বে। বন্ধ আর হড়তাল ‘ম্যানেজ’ করতে পারলেই রাজ্যটি শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে যাবে।
ব্রাত্য বসু হঠাৎ প্রচার পাওয়ার লোভে বেঁফাস মন্তব্য করে দিলেন। তিনি নাকি ‘গোয়েন্দাগিরি’ করতে রাজি নন। কার উদ্দেশ্য তিনি গোয়েন্দাগিরি করার উল্লেখ করেছেন না বললেও বোঝা যায়। উচ্চশিক্ষা দফতর ধর্মঘটের দিন কারা অনুপস্থিত ছিলেন তেমন কোন তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু শিক্ষা দফতরের কর্তারা ব্রাত্য বসুকে ব্রাত্য রেখে নিজেরাই তালিকা তৈরি করতে শুরু করে দিলেন। অনেক জননেতা এইরকম অপমানিত হয়ে সরব হন। অনেকে আবার ক্ষমতা হারাবার ভয়ে নীরব থাকেন। ব্রাত্য বসুর নীরব রয়ে গেলেন। যারা চাকরি করেন, তাঁরা রোজ রোজ এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। ব্রাত্য বসু চাকুরিজীবি। ‘মমতা নাট্য কোম্পানি’তে তিনি শিক্ষামন্ত্রী চরিত্রে অভিনেতার চাকরি করছেন।
অনেক সংবাদমাধ্যম বলাবলি করছে, সাংবাদিকদের অধিকার হনন হয়েছে। কারণ, ব্রাত্য বসুর কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকে বলছেন, ‘রাজনৈতিক সমীকরণ’ নতুন মোড় নিল। অনেকে আবার বলছেন, এসব তো জানা কথা, ক্ষমতা কুক্ষিগত আছে একজনেরই হাতে। বাকি সব নিমিত্ত মাত্র। পোস্ট তো একটাই। বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট। আজ ব্রাত্য বসু নিজেকে একটি নিরেট ‘ল্যাম্পপোস্ট’ প্রমাণ করে খুশি হয়ে মহাকরণ থেকে নীরবে প্রস্থান করলেন। এই রাজ্য এখন মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আলটপকা মন্তব্য করার অধিকার কারোর নেই।