বিপিন বাবুর কারণ সুধা। মেটায় জ্বালা, মেটায় ক্ষুধা। ক্ষিদে মেটাতে গিয়ে প্রাণের জ্বালা মিটিয়ে উবে গেল প্রায় দেড়শোর মতো প্রাণ। চোলাই খেয়ে মগরাহাট এলাকায় এত লোক মরে গিয়ে বর্তমান সরকার আর তার পেটোয়া খবরের কাগজগুলিকে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার সু্যোগ দিয়ে গেল। এ রাজ্যে সরকার এসেছে তার বয়স আট মাস। এর মধ্যেই দুর্নীতিতে ভরে যাচ্ছে রাজ্য। তাই চোলাই বানানোর চল বেড়েছে এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে!
আবগারি দফতরের কর্তারাই জানাচ্ছেন, সম্প্রতি রাজ্যে দেশি ও চোলাই মদের বিক্রি মারাত্মক ভাবে বেড়েছে। ঠান্ডা পড়ার আগেই গা গরম করার এই ওষুধটার বিক্রি গত দুমাসের মধ্যেই আকাশ ছুঁয়েছে। দেশি মদের বিক্রির হিসেব আবগারি বিভাগে থাকে। কিন্তু চোলাইয়ের হিসেব কে দেবে? দেশি মদের ব্যাবসা যখন আকাশ ছুঁয়েছে তখন চোলাই বিক্রির হার মনে হয় আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। পরিবর্তনের হট্টগোলে এইটুকু পরিবর্তন আগেই আন্দাজ করেছিল কিছু লোক। এখন চাক্ষুষ হল।
একদিকে সরকারি আবগারি অফিসাররা বলছেন গত দুমাসে দেশি ও চোলাই বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমগুলি এতেও পুরোন সরকারের দোষ দেখতে পেয়েছে। গত দুমাসে দেশি ও চোলাই মদ বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সিপিএম কি করে এল? সিপিএমের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে রাজ্য সরকার সস্তার রাজনীতি করছে। আর লেজ নাড়াচ্ছে কিছু মিডিয়া। যদি চোলাই কারখানার মালিকের রাজনৈতিক রঙ সবুজ হয় তবে আগে যে তার রঙ লাল ছিল এই রকম প্রমাণ করার তাগিদ বেড়ে গেছে। এই ব্যাপারে মাধ্যমগুলি তর্জনি আর মধ্যমা এক সঙ্গে করে জোড়া আঙুল তুলেছে। আগেকার সরকার চোলাই তৈরি বন্ধ করতে পারেনি বলেই নাকি এখন এত লোক মারা গেল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম চাটুকারিতার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যেন সংবাদের সং সেজে ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচ্ছে। ঢালাও চোলাই পাওয়া যাচ্ছে। মদের নেশা এমন জিনিস যত পাওয়া যাবে লোকে তত খাবে। তাই খাচ্ছে। সিপিএম এখন আর রাজ্য সরকার নয়। গত দুমাসে চোলাই বিক্রি বেড়েছে বলে ওদের দিকে আঙুল তুললে আহাম্মকি হবে না তো! কিন্তু কে শোনে কার কথা! যত দোষ নন্দ ঘোষ! মদে বিষক্রিয়া হয়ে আগেও লোক মারা গেছে। এখনও মারা গেল। ভবিষ্যতেও মারা যাবে। কিন্তু মিডিয়ার নোংরা রাজনীতি করার প্রবণতা দিনের দিন বেড়ে চলেছে। এই ধরনের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র উপায় হল পুলিশের কড়া নজরদারি। যারা চোলাই খায় তারা মদ ছাড়ার প্রবচন শোনেনি কোনদিন। তাই রক্ত বমি না হওয়া পর্যন্ত মাতালরা বুঝতেই পারেনা যে চোলাই খাওয়া বিপজ্জনক। অনেক মাতাল আবার বমি পায়খানা হলে এক গ্লাস গলায় ঢেলে ভাবে এই ওষুধেই রোগ সারবে। গা ম্যাজম্যাজ, মাথা ধরা, হাত পা ব্যথা, মনের ব্যথা সব রোগেই এক ওষুধ। পুলিশের নজরদারি ঠিকঠাক চললে এইরকম দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কিন্তু এখন পুলিশকে কম লোক ভয় পায়। পরিবর্তনের বাজারে সবুজ রঙের আবির দেখলেই পুলিশ ভয় পাচ্ছে। সবুজ রঙের জামা গায়ে গলিয়ে অঢেল চোলাই বানাও। বেশ করব। দশ বছর চুপ থাক তোরা।
যদিও মহাকরণে রাজ্যের মুখ্যসচিব বলেছেন, চোলাই মদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। মাত্র দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পুলিশি তদন্তও চলছে। কিন্তু ‘অভিযান’কে কেউ ভয় পাবে তো? থানা থেকে দুষ্কৃতীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে খোদ মূখ্যমন্ত্রী রাতদুপুরে থানায় দৌড়চ্ছেন আজকাল। সরকার পক্ষের দলের নেতারা থানায় গিয়ে শাসানি দিয়ে বীরের মতো দুষ্কৃতীদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে । অভিযান কথাটা না অভিধানেই থেকে যায়!
মৃতদের পরিবারকে দু লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে বিধানসভায় জানিয়েছেন রাজ্যের পরিষদীয় দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। অর্থাৎ চোলাই মদ খেয়ে মরলে এবার আইনত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। মাতালে মাতলামি করলে সহ্য করা যায়। কিন্তু সরকারি মন্ত্রীরা যদি এমন কাজ করছেন তবে খানিকটা সন্দেহ হয় বই কি। কোন নিষিদ্ধ পানীয় তো খাওয়াই নিষিদ্ধ। তাই খেয়ে কেউ মারা গেলে তার আবার ক্ষতিপূরণ কিসের? মানবিকতা দেখাতে গিয়ে খুব বেশি মাতাল হয়ে যাচ্ছে কি কেউ কেউ? যারা কিছু না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে তাদের ক্ষতিপূরণ কই? যারা আধপেটা খাচ্ছে তাদের কিছু চাল ডাল দান করে মানবিকতার বিজ্ঞাপন করা যেতে পারত। চোলাইয়ের চল ইদানীং বেশি বেড়ে গেছে। প্রতিটি মৃতের পরিবারের সুস্থ লোকজন এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করবেন। চোলাইয়ের ঠেকের খবর একমাত্র পুলিশের কাছে থাকে আর থাকে যারা চোলাই খাচ্ছে তাদের বাড়ির লোকজনের কাছে। ঝাঁটা হাতে মাতাল খুঁজতে তো বাড়ির লোকজনকেই যেতে হয়। চোলাইয়ের ঠেক কোথায় কোথায় আছে আর কোথায় কোথায় নতুন ঠেক তৈরি হল এই খবর এদের চেয়ে সঠিক কেই বা জানবে? মৃতের পরিবার পিছু দু লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মৃতের বাড়ির লোকের মুখ বন্ধ করে রাখা হল। দাহ সংস্কারের জন্যে বরাদ্দ হয়েছে মৃত পিছু দশ হাজার টাকা। এই নিয়ে পাবলিক ডুগডুগি বাজাও। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চলুক। মিডিয়া খিস্তি খেউড় করুক। চোলাই খাও আর পটাপট পটল তোল। চিন্তা নেই। দু লাখ টাকা বাড়ির লোকের কাছে পৌঁছে দেব।