Flickr Gallery

Friday, December 9, 2011

মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশিঃ শিল্প ধর্মঘট

ধন্যি তুমি মিডিয়া। সমস্যা শুধু বাংলায়। আর সমস্যা দু তিনটি সংবাদমাধ্যমের। ২৮শে ফেব্রুয়ারির শিল্প ধর্মঘটের আগাম আওয়াজ শুনে সংবাদমাধ্যমগুলি আগাম চেঁচামিচি শুরু করে দিল। এবার ধুয়ো তুলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার। অহেতুক ছাত্রছাত্রীদের মাথায় একটা প্রচ্ছন্ন চাপ সৃষ্টি করছে সংবাদমাধ্যম। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোন রাজ্যে এত হৈ চৈ হচ্ছেনা। যেসব ছাত্রছাত্রীরা ঐ দিন পরীক্ষা দেবে তাদের অধিকাংশ অভিভাবক সেই দিন ধর্মঘটে শামিল হবেন। কিন্তু অভিভাবকদের চেয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্যে মিডিয়ার দরদ উথলে উঠেছে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হয়ে গেছে।
২৮শে ফেব্রুয়ারি আবার দেশব্যাপী শিল্প ধর্মঘট। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শ্রম আইনের প্রয়োগ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবির পাশাপাশি শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা ছাড়াও যথাযথভাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি দেওয়া, স্থায়ী কাজে ঠিকাকরণ নয়, ঠিকা শ্রমিকদের নিয়মিত শ্রমিকদের হারে মজুরি সুবিধা, সবার জন্য নিশ্চিত পেনশন, শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১০হাজার টাকা করার দাবিতেও স্তব্ধ হবে দেশ। বাজেট অধিবেশনের আগে এই ধর্মঘট তাৎপর্য্যপূর্ণ তো বটেই।
কিন্তু এইবারও পোয়াবারো হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের। বাংলায় একটা কথা আছে, যারে দেখতে নারি, তারি চলল বাঁকা। মানুষকে সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে মিডিয়ার জুরি মেলা ভার। যে সব সমস্যা নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে সেগুলির সবই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। যারা মিডিয়াকে শুনছে ও দেখছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই একই সমস্যার জন্যে ভুক্তভূগী। যেহেতু মিডিয়া এইসব সমস্যার আলোচনাকে অস্পৃশ্য করে রেখেছে তাই এই সমস্যা নিয়ে যারা আন্দোলন করবে তাদের মিডিয়া কুলাঙ্গার বলে ডাকতেও কুন্ঠাবোধ করবেনা। আর তাই শিল্প ধর্মঘটের ডাক শুনে মিডিয়া রে রে করে তেড়ে এসেছে। ধর্মঘট ঠেকানোর মতো শক্তি এদের নেই। কিন্তু এরা ধর্মঘটের কালক্ষণ নিয়ে কটুক্তি করে মানুষকে আসল সমস্যা থেকে সরিয়ে রাখতেই পারে।
আসলে যাদের টাকায় সংবাদমাধ্যমগুলি পুষ্ট, ভয় ধরেছে তাদের। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে লাভও হবে তাদের। বেপরোয়া দুর্নীতি এবং অর্থনীতিতে বিপুল অঙ্কের কালো টাকার রমরমা। এইসব নোংরামি লুকিয়ে রাখতে মিডিয়া যদি পুঁটি মাছের মতো লাফিয়ে মরে তাহলে আর কি করা যেতে পারে! ধর্মঘটের দিন আসমুদ্রহিমাচল টলে যাবে। তার আগেই টলে টলে ডিগবাজির সার্কাস দেখাচ্ছে মিডিয়া। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে খবরের কাগজগুলিতে সম্পাদকীয় লেখা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কেন ধর্মঘট, সেই সমস্যা নিয়ে কোন আলোচনা হচ্ছেনা। বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলি আলোচনা চক্র বসিয়ে ফেলেছে। ‘ঐ দিন পরীক্ষার্থীরা কি করে পরীক্ষা দিতে যাবে’ এই বিষয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিয়ে ফেলেছে মিডিয়াগুলি। দায়িত্বজ্ঞানহীন ও নির্লজ্জের মতো দিনরাত নাচ দেখায় যে সব মিডিয়া তাদের দরদ বেড়ে উঠেছে।
মিডিয়ার উচিত পরীক্ষা চলাকালীন তাদের সবরকম মনোরঞ্জন বন্ধ রেখে শুধু পড়াশোনার চর্চা করে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক পথ খুঁজতে সাহায্য করা। এদের উচিত ঐ সময়ে যতরকম ক্রিকেট দেখানো হয় তা বন্ধ রাখার জন্যে হৈ চৈ করা। মিডিয়ার উচিত ঐ সময়ে কোন বৈদ্যুতিন মাধ্যম যেন সিনেমা, কার্টুন ইত্যাদি না দেখায় তার জন্যে জনমত গড়ে তোলা। আমি জানি এসব অবাস্তব কথা। বাস্তব শুধু শ্রমিকের কান্না। আর এই কান্না দেখে উদ্বাহু হয়ে মিডিয়ার পৈশাচিক উলঙ্গ নৃত্য। জনরোষ দেখে মিডিয়া ভয়ও পায়। জনরোষের কবলে যেন দুর্নীতিপরায়ণ ও কালো টাকার কুমীরদের বিপদে না পড়তে হয়। তাই তারা নিজেদের বিপদ এড়াতে মানুষকে বিপথে চালিত করার জন্যে পরীক্ষার ধুয়ো তুলে ধর্মঘটের মূল বক্তব্য থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। প্রতিবারই সরিয়ে নেয়। এ কথা নতুন নয়। এবারও সরিয়ে নিল। নইলে যে সব অভিভাবকদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের চেয়ে মিডিয়ার দরদ কেন বেশি হল? মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হলে দৃষ্টিকটু লাগে। তা লাগুক। নির্লজ্জের আবার লজ্জা! ন্যাংটার আবার বাটপাড়ের ভয়!
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM