Kishenji at press meet |
২৪শে নভেম্বর বুড়িশোলের জঙ্গল এলাকা ঘিরে ফেলে মাওবাদীদের কার্যত কোণঠাসা করে দেওয়া হল। এর পরই শুরু হয় ব্যাপক গুলির লড়াই. প্রায় আধঘণ্টার গুলির লড়াইয়ের শেষে কিষেণজির মৃত্যু হল বলে জানা গেল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ শেষ হয়ে গেল গুলির লড়াই। এখন পর্যন্ত খবরে প্রকাশ একটি মাত্র মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
তার পাশে একটি একে-৪৭ রাইফেলও পাওয়া গেল। ১০০০ বন্দুকধারী পুলিশের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের ব্যাপক গুলির লড়াই চলল। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে অন্য কোন মাওবাদীর মৃত্যু হলনা। মৃত্যু হলেও তাদের দেহ পাওয়া গেলনা। অর্থাৎ মাওবাদীরা মারা গেলেও তাদের মৃতদেহ অন্যান্য মাওবাদীরা সরিয়ে নিয়ে যায়। শুধু মাওবাদীদের মিলিটারি কমিশনের অন্যতম সদস্য কিষেণজির মৃতদেহ আর তার রাইফেলটা প্রমাণ হিসেবে ফেলে রেখে যাওয়া হল। এমন কি গুলির লড়াইতে কোন পুলিশের দেহে গুলির আঁচড় পর্যন্ত লাগল না। আর গুলির লড়াইয়ের শেষে জঙ্গলের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় যে দেহটি তাকে দেখে পিপলস ওয়ার গ্রুপ বা জনযুদ্ধের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কিষেণজির বলেই দৃঢ় ধারণা হয়ে গেল উপস্থিত রাজ্য পুলিশ ও সিআরপিএফের পদস্থ কর্তাদের। তাহলে কি এই ধরণের তুমুল 'গুলির লড়াই' গেরিলা যুদ্ধে দক্ষ এই কিষেণজি একাই লড়ছিল? তাই কি কিষেণজির গুলির লড়াইতে মৃত্যু হল? নাকি কিষেণজিকে কোথাও একান্তে ডেকে এনে বা বেঁধে এনে তাকে গুলি করা হল?
তাই কি শুধু একে ৪৭ দেখেই তাকে শনাক্ত করা যেতে পারল যে কিষেণজিরই মৃত্যু হয়েছে! কিষেণজির ছায়া সঙ্গিনী সুচিত্রা কোথায় ছিল? সুচিত্রাও নাকি আহত হয়েছে! আহত হয়ে পালিয়ে গেল নাকি আত্মসমর্পণের জন্যে সাজতে গেল? নাকি কিষেণজির মৃত্যুই হয়নি! ‘কিষেণজি’ কি তার এই নামকে নিজেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে আবার অন্য নামে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে? কোন মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা বাক্স দেখে যেমন বলা যায়না যে বাক্সের মালিকেরই মৃত্যু হয়েছে তেমনি জঙ্গলের মধ্যে কোন একটা মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা রাইফেল দেখে কি করে বলে দেওয়া যায় যে রাইফেলের মালিকেরই মৃত্যু হয়েছে? কি করে এক লহমায় বলে দেওয়া যায় ওই রাইফেলের মালিক ছিল কিষেণজি? ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাপ্রচার এখন তুঙ্গে। সঠিক অনুসন্ধান না করে শুধু রাইফেল দেখে কিষেণজিকে যারা চিনতে পেরেছে তারা কিষেণজির রাইফেল নয় রাইফেলধারীকেই ভাল ভাবে চিনত মনে হয়। নয়তো যার মুখের বদলে যারা শুধু গামছাই দেখেছে সবাই তারা নিসন্দেহে বলে কি করে বলে যে কিষেণজি মারা গেছে। তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে দুর্দিন এল? আদৌ কি লড়াই হয়েছিল? নাকি নাটক হল আবার? যেমনটি জাগরীর বেলায় হল! সাবধান থাকুন। হতে পারে ‘কিষেণজি’ নামটি মারা গেছে। কিন্তু রাইফেলধারী গামছাধারী চরিত্রটি জীবিত আছে। কত লোকই তো মরে গিয়ে জীবিত ঘুরে বেড়ায়। যাদের খুব কম লোকই দেখেছে তাদের এইরকম কাজ করতে আরও সুবিধা। আমি যা বলছি তা ভুল হতেই পারে। ভুল হলেই ভাল। সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যু এইভাবেই হয়। কিন্তু এমন কি হতে পারে না যে আমি যা বলছি তার অনেকটাই ঠিক! হতে পারে কিষেণজি ছদ্মনামটা মারা গেলেও কোটেশ্বর রাও বেঁচে গেল। নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকার জন্যে এর চেয়ে বেশি সুরক্ষা আর কোথায় পাওয়া যাবে?