প্যালারামের ফন্দি! |
প্যালারামের যেদিন পেটখারাপ হবে সেদিন সব ভড়ভড় করে বেরিয়ে আসবে। প্যালারাম এখন জেলে। জামাই আদরে আছে। ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া চলছে। এখন পেটখারাপ হওয়ার চান্স নেই। তবে প্যালারামের বন্ধু কোটেশ্বর বেঘোরে প্রাণ হারানোর পর ভুত হয়ে এসে প্যালারামের ঘাড়ে চেপে বলল, “এই শয়তান, তুই কেন বলে দিলি আমি কোথায় ছিলাম?” প্যালারাম জেলে। কিন্তু ভুতের কাছে তো আর জেল জল বলে কিছু মানামানি নেই। প্যালারাম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বলল, “আমি তো বলিনি দাদা, আমি তো জেলে!”
কোটেশ্বর বলল, “ঠিক বলেছিস, তুই জেলে, কিন্তু আমার সুচিত্রাকে ওরা নিয়ে গেল, তখনই শুনলাম নাকি তুই শর্ত রেখেছিলি সুচিত্রার যেন কিছু না হয়?”
প্যালারাম একটু ঢোঁক গিলে নিল। এরপর একটু ধাতস্থ হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে নিল। ঘাড়ের ওপর হাত বুলিয়ে দেখল কোটেশ্বরের ভুত তার ঘাড়ে নেই। এদিক ওদিক চেয়ে দেখতে পেল রাজার সেপাইরা তাকে পাহারা দিচ্ছে। জামাইয়ের নাকের ওপর ঘামের ফোঁটা দেখে এক সেপাইয়ের সন্দেহ হল। সেপাই জিজ্ঞেস করল, “জামাইবাবু আপনার কোন অসুবিধা হচ্ছে নাকি? আদেশ আছে যেন আপনার কোন অসুবিধা না হয়।”
এই শুনে প্যালারাম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, “ধুর, ভুত-ফুত বলে কিছু নেই।”
কোটেশ্বরের ভুত জানলা দিয়ে আবার উঁকি মারল, “শোন প্যালা, তুই কিন্তু নেমকহারাম, তুই জনগণের জন্যে কাজ করবি বলে আজ আমায় মারিয়ে দিলি! তুই না লেলিয়ে দিলে ওরা বুঝতেই পারল কি করে আমার আস্তানা! তা ভালই করেছিস। কিন্তু সুচিত্রাকে আমার কাছ থেকে ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। এইটা তুই কিন্ত ঠিক করলিনা।” কোটেশ্বরের ভুত একটু গলা উঁচু করে বলল, “আমি তোকে ছাড়বনা, তোর ঘাড়ে আমি বসেই থাকব। আমি যেমন করে মরলাম তুইও তেমনি মরবি। তুই দেখে নিস।”
প্যালারাম বুঝল যে কোটেশ্বর যতই জানলা দিয়ে উঁকি মারুক রাজপ্রাসাদে এসে ঘাড় মটকাতে পারবেনা। খানিকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই বলল, “না মানে ব্যাপারটা তুমি বুঝবেনা। তুমি তো ভুত। তোমার কাছে বন্দুকও নেই যে আমাকে মেরে দেবে। তাছাড়া আমি এখন রাজার জামাই।”
“কি বুঝবনা? আমি কি বোকা নাকি রে? তোর বৌদি আমার সঙ্গে থাকত বলে তোর বাড়ির লোক রাগ করত। আমি জানিনা নাকি! ওই সেপাইগুলো আমাকে মেরে ফেলার সময়ে তোর বৌদিকে সরিয়ে দিল। আমি বুঝলাম পেছন থেকে কলকাঠি তুই নাড়াচ্ছিস। নইলে ওরা তোর বৌদিকে মারলনা কেন বল?” কোটেশ্বরের ভুত ফ্যাসফ্যাসে গলায় আরও বলল, “শোন প্যালা, তুই এখন রাজার জামাই। ভালমন্দ খেয়ে নে। শরীর স্বাস্থ্য ভাল কর। এরপর যবে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরোবি তখন দেখিস তোর কি হাল করি।”
প্যালারাম সুর চড়াল, “শোন ভায়া, আমি রাজার জামাই। তোমরা আমার গায়ে হাত দেবে কি করে বল তো? তুমি তো আর নেই। আর বৌদিকে নিয়ে তুমি ঘর করতে বলে আমাকে সমাজে ছি ছি করত সবাই। তুমি মরে আমাকে আর আমার বৌদিকে বাঁচিয়ে দিয়েছ।”
কোটেশ্বর মুখ থেকে গামছা সরাতে গিয়ে দেখল গামছা নেই। ভুতের মুখে গামছা থাকে কি করে! রেগেমেগে পিঠে বাঁধা রাইফেল খুলতে গিয়ে দেখল রাইফেলটাও নেই। বুঝতে পেরে প্যালারাম টিটকিরি দিয়ে উঠল, “দেখলে তো ভায়া বললাম কিনা তুমি কিসসু করতে পারবেনা।”
কোটেশ্বর কিছু না করতে পেরে বিরক্ত হয়ে জানলা বেয়ে নামতে নামতে বলল, “বাইরে যবে বেরোবি, সেদিন আর তো ভালমন্দ খেতে পারবিনা, সেদিনই তোর পেটখারাপ হবে। আর ভড়ভড় করে সব বের করে দিবি। তুই বাইরে বেরিয়ে আয়। ততদিন তোর জন্যে আমি জঙ্গলেই ঘাপটি মেরে বসে থাকব।”
আবার নাকের ওপর ঘাম প্যালারামের। সেপাই জিজ্ঞেস করল, জামাইবাবু, আপনার শরীরটা ঠিক যাচ্ছেনা বোধহয়। রাণীমাকে হাঁক পেড়ে ডাকব নাকি?” প্যালারাম নাকের ঘাম পুঁছতে পুঁছতে বলল, “না রে, আমার পেটটা কেমন গুড়গুড় করে মোচড় দিচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে কিছু একটা আটকে আছে।”
সেপাই বলল, “পেটেই রেখো জামাইবাবু, মুখে এনো না। বমি করে দিলে কিন্তু চারদিক নোংরা হয়ে যাবে একেবারে।”