পুরাকালে বঙ্গবর্ষে ক্ষণিককাল মহারাণী মমতার রাজত্ব ছিল। তাঁহার মস্তিষ্কপ্রসূত বাক্যশ্রবণ করিয়া সেই বর্ষের প্রজাগণ কালযাপন করিতেন। মিথ্যাচারী মহারাণী মমতা প্রজাবর্গের সমীপ কৌতুকোপাদান রূপে গণ্য হইতেন।
“হে সর্বলোকগামী হুতোম পন্ডিত, আপনি আমাদিগের নিকট বর্ণিত করুন কেন তাঁহাকে কৌতুকোপাদান বলিয়া গণ্য করা হইত। আপনার বাক্যশ্রবণে আমাদিগের মানসপটলে ক্ষণিক জ্ঞানালোক প্রক্ষেপিত হইবে।” এই বলিয়া রাজা জনার্দন হুতোম পন্ডিতকে আনয়নের নিমিত্ত মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা হুটাহুট শব্দবাণ নিক্ষেপ করিলেন।
“সেই যুগে এক স্বনামধন্য মহাকবি বঙ্গবর্ষে বিরাজিত ছিলেন। তাঁহার প্রতিভা দূরদিগন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রজাসকলের নিকট সেই কবি প্রণম্য ছিলেন এবং মহাকবি প্রজাসকল দ্বারা কবিগুরু উপাধি ভূষিত হইয়াছিলেন। মিথ্যাচারী মহারাণীর জন্মগ্রহণের বহুকাল পূর্বেই মহাকবি স্বর্গারোহণ করিয়াছিলেন। মহারাণী মমতা কবিগুরুকে প্রণাম জানাইয়া বিভিন্ন জনপদে তাঁহার স্তুতিগান করিতেন ও বিকৃত ইতিহাসভাষ্যদ্বারা প্রজাসকলকে হাস্যরসে স্নিক্ত করিতেন।”
“কথিত আছে একদা মহারাণী মহাত্মা মোহনদাস করমচন্দ্রের অনশনধর্ম পরিত্যাগ করাইবার নিমিত্ত কবিগুরুর অশরীরি আত্মাকে আনয়ন করিয়া মহাবতার মহাত্মাকে লেবুফলের নির্যাস মিশ্রিত পানীয় পান করাইয়া ছিলেন। সেই যুগের প্রজাসকল মহারাণীর নিকট এইরূপ শ্রুত হইয়া কৌতুককালগর্ভে নিক্ষেপিত হইয়া দীর্ঘকাল কৌতুকে জীবনযাপন করিয়াছিলেন। প্রজাসকল উপলব্ধি করিয়াছিলেন যে অস্থিরমস্তিষ্ক দেবী মমতা পুরাণ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হইয়াও পুরাণবেত্তা ছিলেন। কারণ মহাবতার মহাত্মা মোহনদাসের অনশনধর্ম পরিত্যাগের বহুকাল পূর্বেই মহাকবি কবিগুরু পারলৌকিক পথের পথিক হইয়াছিলেন। যে সকল রাজা ও রাণী পুরাণ সম্বন্ধে যৎসামান্য জ্ঞান আহরণ না করিয়া রাজকার্য পরিচালনা করেন, তাঁহাদের বর্ষের প্রজাসকলকে দুঃখ ও দৈন্যের সম্মুখীন হইতে হয়।” এই বলিয়া প্রজাসকলকে সতর্কবার্তা প্রেরণ করিয়া হুতোম পন্ডিত ফরফর করিয়া দুই পক্ষবিস্তারপূর্বক মহাকাশে বিলীন হইলেন।