Flickr Gallery

Sunday, March 4, 2012

উল্টো রথের সোজা পথ



ফ্যাসাদে পড়েছে রাজধর্ম। পাবলিকের মন জয় করার জন্যে মন্ত্রী এবং নেতারা যেসব মন্ত্র আউড়ে দিন কাটাচ্ছিলেন সেসব এখন ফুসমন্তর। মুখোস থেকে মাঝে মাঝে মুখ উঁকি মারছে। দাঁত বেরিয়ে পড়ছে। মুখের মধ্যে চক্রান্তের চকলেট। তাই চিবিয়ে জাবর কাটছে। মুখ খুললেই পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। যেখানে সেখানে চক্রান্তের চরকিবাজি ছাড়া হচ্ছে। একনাগাড়ে সবই ভুল প্রমাণিত হয়ে চলেছে। চরকি ঘুরছেনা। চরকি এখন ছুঁচোবাজির মতো এঁকেবেকে গোঁত্তা খেতে খেতে কখনো কখনো নিজের দিকেই ফিরে আসছে। বারুদে মরচে পড়েছে। আগুন লাগাতে চেষ্টা করাই সার। আগুন জ্বলছেনা। ভুসভুসে বারুদ জ্বলার আগেই নিভে যাচ্ছে। এবার অন্য কিছু চাই। এবার অন্য কিছু সাজাতে হবে।

দিনের পর দিন অনেকরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ধর্ষণ মানে সাজানো ঘটনা। অনেক অনেক অভিযুক্তরা এখনও সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুন হলেন প্রদীপ তা। তাও সাজানো। কারণ সাজানো হল খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা। মামলা যতটা হালকা করে সাজানো যায় ততই মঙ্গল। পুলিশ তুমি কার? এমন করে মামলা সাজাও যাতে বলতে পারি প্রদীপ তা খুনী ছিলেন, তাই তাঁকেও খুন হতে হল। এমন প্যাঁচ মারো যাতে বলতে পারা যায়, কমল গায়েনকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুন হতে হল। সাংবাদিকদের রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটুনি। এও সাজানো ঘটনা। অথচ দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছেনা। আগের মতোই সেজেগুজে বীরের মতো হাঁটাচলা করছে। আবার বীরত্ব দেখানোর জন্যে তৈরি হচ্ছে। রায়গঞ্জে শিক্ষক পিটিয়ে বুড়োহাবড়া লোকগুলোকে ‘ছোট ছেলে’ বানিয়ে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হল। অথচ ছোট ছেলেরা মাজদিয়ায় অসভ্যতা করে জেলে চলে গেল। অনেকে বেসুরো গান ধরেছে। তোমরা করলে লীলা আর আমরা করলে বিলা। লে হালুয়া। আমরা তোমরা কোথা থেকে চলে এল! ভাইপোর ভয়ে পুলিশ পালায়। পাবলিক বিরোধ করলে চাপে পড়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভাইপোর পিসিকে আইনও ভয় পায়। আইনের রক্ষক তো নিমিত্ত মাত্র।

বিরোধীরা বিরোধ দেখানোর জন্যে মিছিল করছে। তাই দেখে রাজধর্মীরা বিধর্মী হয়ে গেল। তারাও মিছিল করে বসছে। একটা মিছিলে বেশি লোক হয়নি। তাই আরেকটা মিছিল করতে হবে। যেখান থেকে পারিস ভাই লোক ডেকে আন। আগের মিছিলে পারিনি। এইবারের মিছিলে নির্ঘাত চামড়া গুটিয়ে দেব। বিরোধীদের মিছিলকে চ্যালেঞ্জ করে সরকার এখন সরকারবিরোধীদের বিরোধী আসনে বসে পড়ল। বিরোধীদের বেশি বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজকাজ শিকেয় উঠেছে। বিরোধীদের শক্তি বেশি তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। পেশি ফুলিয়ে মিছিল করে সরকার যতবার নিজেদের শক্তি দেখাতে যাচ্ছে ততবার মুখ থুবড়ে পড়ছে। এখন পেশিশক্তিটুকুই সম্বল। বিরোধীদের বিরোধ করার কাজ এই সরকার ভালই রপ্ত করেছে। তাই রাজকাজের বালাই নেই। মন্ত্রীরা মন্ত্র পড়ছে। শ্রাদ্ধ থেকে সত্যনারায়ণ পুজোর মন্ত্র এক হয়ে যাচ্ছে। ওঁ চক্রান্তায় নমঃ।

বিরোধীদের বিরোধ করতে সরকার উল্টো পথ ধরেছে। একবার বিরোধীদের মিছিলের পথে এক দিনের ডাকে মিছিল করে তেমন পাবলিক জোগাড় হলনা। এইবার চারদিন ধরে পাবলিককে বাসে ট্রাকে চাপিয়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে এসে উল্টো দিক দিয়ে মিছিল শুরু করতে হবে। রাজধর্ম ছেড়ে ছেলেমানুষ হয়ে যাও। তুই দু’পা যাবি তো আমি চার পা যাব। তুই সোজা হাঁটবি তো আমি উল্টো হাঁটব। তুই সরকারের বিরোধিতা করবি তো আমি তোদেরই বিরোধিতা করব। তুই উত্তম ছিলি বলে আমি অধম হব। বেশ করব। দশ বছর চুপ থাক তোরা। 

উল্টো মিছিল মানে উল্টো রথ। আজ থেকেই উল্টো গোনা শুরু করে দিলাম। এতদিন বলতাম এক মাস গেল। পাঁচ মাস গেল। নয় মাস গেল। গেল গেল রব আর তুলবনা। এবার বলব চার বছর দুই মাস যাবে। পরের মাসে বলব চার বছর এক মাস যাবে। পেছন ফিরে দেখতে নেই। নাকি অমঙ্গল হয়। তাই সামনের দিকে তাকিয়ে থাকব। আর কতদিন গেলে পাঁচ বছর পূর্ণ হবে তাই ভাবব। কিন্তু খটকা লাগে। এত খটাখটি শুরু হয়েছে বছরের পর বছর গোনার সুযোগ আমার হাতে থাকলে হয়। হে মা ভবানী, তোমার তো ভাঁড়েও ভবানী। আমি তা জানি। তবু প্রার্থনা করছি আমাকে ঠিকঠাক পাঁচটি বছর গোনার সুযোগ দিও কিন্তু। সোজা রথের দিন থেকে উল্টো রথের দিন গুনতে হয়। আবার উল্টো রথ শেষ হলে বছর গুনতে হয়। আবার থেকে সোজা রথের দিন গুনতে হয়। তাই আজ থেকে সোজা রথের দিন গোনার কাজটি শুরু করা যাক।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM