Flickr Gallery

Monday, August 12, 2019

ছাই দিয়ে আগুন ঢাকা যাবে কি?


বিবিসি থেকে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে ওদের পোর্টালে, যেখানে দেখা যাচ্ছে শ্রীনগরে শুক্রবার নামাজের পরে কয়েক হাজার কাশ্মীরির বিক্ষোভ ও জনসভা। কারফিউ, ১৪৪ ধারা অস্বীকার করে ওরা ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। আমাদের দেশের সরকারের কাছে এই বিক্ষোভ মোটেই কাম্য নয়। রাষ্ট্র সক্রিয় হয়ে বিদ্রোহ দমন করার জন্যে গুলি ছুঁড়ছে। পাথর ছুঁড়ছে। বন্দুক উঁচিয়ে মানুষ তাড়া করছে। টিয়ার সেল ফাটাচ্ছে। পেলেট গান ছুঁড়ছে। মানুষ গুলি থেকে বাঁচতে রাস্তায় শুয়ে পড়ছে। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। শ্রীনগরে এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী হয়েছে। সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পোর্টালে কাশ্মীরের অশান্তির বেশ কয়েকটা ফটো আপলোড করা হয়েছে। একটা ফটোয় দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরি যুবকরা আধাসামরিক বাহিনীর ওপর পাথর ছুঁড়ছে। একেবারে মুখোমুখি! আরেকটা ফটোয় দেখা যাচ্ছে মহিলাদের বিক্ষোভ। সেখানে টিয়ার গ্যাস ফাটানো হয়েছে। মহিলারা ভারত বিরোধী বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে দৌড়োচ্ছে। ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের কাশ্মীর ছেড়ে বেরিয়ে আসার হিড়িকের ফটো দেখা যাচ্ছে। এরকম আরও অনেক ফটো দেখলাম ওদের পোর্টালে। ভারতবিরোধী খবরও নজরে পড়ল নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, শুক্রবার নামাজের জন্যে দুপুর ১২টা বেজে ৩৭ মিনিটে কারফিউ শিথিল করা হলেও ঠিক কুড়ি মিনিট পরে আবার কারফিউ জারি করা হয়। ওই খবরে আরও জানাচ্ছে, শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখা গেছে। পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস আর পেলেট গান ছুঁড়তে দেখা গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরে পুলিশকে লক্ষ্য করে কাশ্মীরিদের পাথর ছুঁড়তেও দেখা গেছে। ওই খবরে আরও জানা যাচ্ছে। ভোরের আগেই শহরের লোক দোকানদারদের বাড়ি থেকেই দরকারি রসদ নিয়ে আসছে। খবরে বলা হচ্ছে, কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি ‘টেরিটরি ডিসপিউট’। মার্কিন প্রবক্তা মর্গান অর্টাগাস বলেছেন, কাশ্মীর “certainly an incredibly important issue” ও মার্কিন সরকার গভীরভাবে বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রাখছে।

কাশ্মীর টাইমস-এ আজ কোন খবর প্রকাশিত হয়নি। ৯ আগস্ট তারাও বিক্ষোভের ফটো ও খবর প্রকাশ করতে পেরেছিল। আলজাজিরা নিয়মিত কাশ্মীরের খবর প্রকাশ করছে। ছাররা গুলির আঘাতে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এই খবর আলজাজিরাতেই মনে হয় প্রথম দেখানো হয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এবিসি নিউজ দুদিন আগে একটি খবর প্রকাশ করেছে। তাতে ভারত বা পাকিস্তানের পক্ষ না নিয়েই স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে।

আমাদের দেশের হিন্দি নিউজ পোর্টাল ‘জনসত্তা’-র একটা খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের একটা বেকারিতে পুলিশ রুটি প্রস্তুতকারকদের ওপর গুলি বর্যণ করতে করতে বলছে “কাশ্মীরিদের জন্যে রুটি বানাচ্ছিস কেন?” The wire নামের একটি নিউজ পোর্টালে নিয়মিত কাশ্মীর সংক্রান্ত খবর দেখতে পাচ্ছি। কাশ্মীরের শান্তি ও অশান্তির খবর আরও কয়েকটি নিউজ পোর্টাল ঘাঁটলে পাওয়া যাচ্ছে। scroll.in ও Quint তার মধ্যে অন্যতম। 

আমরা মানে বাঙালিরা মাঝেমাঝেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেষ্টা করি। তেমনি আমাদের দেশের তথাকথিত ‘মেনস্ট্রিম’ মিডিয়া ছাই দিয়ে আগুন ঢাকতে চেষ্টা করছে। টিয়ার গ্যাস ফাটাচ্ছে দেশের আধাসামরিক বাহিনী। চোখ জ্বলছে আমাদের মিডিয়ার। তাই চোখ বন্ধ করে ময়দান ছেড়ে চম্পট দিয়েছে ওরা। পেলেট গান ছুঁড়ছে বাহিনী। কাশ্মীরিদের চোখ যাচ্ছে। অন্ধত্বের ভান করছে আমাদের মিডিয়াগুলো। সব মিডিয়া এই পর্যায়ে না পড়লেও বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই সরকার বাহাদুরকে ভয় পেয়ে এই ব্যাপারে নিজেদের চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

সংবাদমাধ্যম স্বচ্ছতা অবলম্বন করছেনা। ওরা স্টূডিওতে বসে বিষ ঢালছে কাশ্মীরের ওপর। বিষাক্ত হয়ে উঠছে কাশ্মীরের বাতাস। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম তাদের সংবাদ পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে আমাদের মত অধিকাংশ সাধারণ ভারতীয়কে অজ্ঞতার অন্ধকারেে রাখতে চাইছে। সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যে ও সাজানো সংবাদের মাধ্যমে আমাদের ওপর ধোঁয়া ছড়িয়ে আমাদের চোখ বন্ধ করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন পেলেট গান ছুঁড়ে আমাদেরই অন্ধ করে দিচ্ছে। ওরা বলতে চাইছে কাশ্মীর অশান্ত নয়। সম্পূর্ণ শান্তির আবহাওয়া নাকি কাশ্মীরে! এর ফলে কাশ্মীরিরা মূল ভূখন্ডের ভারতীয়দের সমবেদনা হারাচ্ছে দ্রুত। ওরা আমাদের থেকে মনে হয় অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM