পলাশির যুদ্ধ ভারতীয় ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই সময়ে জমিদারদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার মোগল বাদশাহদের হাত থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায়। সেই সময়ে ঝাড়খন্ডে একেকজন রাজা নিজের নিজের শক্তি মতো জমির দখলদারি নিয়ে রাজত্ব চালাত। এই রাজারা ছিল স্বাধীন। আলাদা আলাদা রাজার আলাদা আলাদা বিচার। আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। আলাদা ন্যায়। সেই ঝাড়খন্ডি রাজাদের সৈন্যবল থাকতরাজারা মোগল বাদশাহকে নজরানা দিত।
কিন্তু ১৭৬৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঝাড়খন্ডি জমিদার ও রাজাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব কেড়ে নেয়। মর্জিমাফিক রাজস্ব দেওয়ার সুবিধে থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ তখনকার রাজা ও জমিদারদের মনের মধ্যে জমছিল। ইংরেজরা এইসব জমিদারদের ওপর শক্তি প্রদর্শন করত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের বর্চস্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীন রাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্দাভিযান চালাত। তকন রাজারা নিজেদের মধ্যেই লড়োত। অনেক রাজা আবার অন্য রাজাকে হারানোর জন্যে ইংরেজদের সাহায্য নিত। কখনো আবার ইংরেজদের সাহায্য করে এক রাজা অন্য রাজাকে হারিয়ে দিত। রাজাদের প্রতিরোধ ইংরেজদের তাঁবেদারি ও আন্তঃকলহের কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও ঝাড়খন্ডের আদিবাসিদের স্বাধীন হওয়ার আন্দোলন সারা ভারতবর্ষে বিরল।
মালপাহাড়ীয়ারা ১৭৭২-৮০ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তিলকা মাঝির নেতৃত্বে সাঁওতালরা বিদ্রোহে অংশ নেয়। এরই মাঝে আবার ১৭৭৮ সালে চোয়াড় বিদ্রোহ হয়। ১৭৯৫ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত বিষ্ণু মানকি ও মেইজু মানকির নেতৃত্বে মুণ্ডারা বিদ্রোহ করে। রারঈ মধ্যে ১৭৯৮-৯৯ সালে মানভূমে ভূমিজ বিদ্রোহ হয়। ১৮০০ সাল থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত পালামৌ ও সরগুজায় ভুখন সিং মুণ্ডার নেতৃত্বে চেরো বিদ্রোও হয়। ১৮১৯-২০ সালে পুনরায় ভুখন সিং মুণ্ডাবিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। ১৮২১ সালে হো-রাও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ১৮৩০-৩২ সালে ওঁরাও-রা বিদ্রোহ করে। এদের নেতৃত্বে ছিলেন বুধু ভগত। ১৮৩১-৩২ সালে কোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৩২-৩৩ সালে ভগীরথ। দুবি গোঁসাই ও প্যাটেল সিং-এর নেতৃত্বে খেরওয়ার বিদ্রোহ হয়। ঠিক এই সময়ে গঙ্গানারায়ণ সিং ভূমিজ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। ১৮৫৬ সালে সিদো ও কানহো মুর্মুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়। এর নাম ছিল সাঁওতাল হুল। ১৮৭৪ সালে ভগীরথ মাঝির নেতৃত্বে খেরওয়ার বিদ্রোহ হয়। এরই মধ্যে ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৮১ সাল পর্যন্ত সরদার বিদ্রোহ হয়। পুনরায় ১৮৮৫-৯৫ সাল পর্যন্ত সরদার বিদ্রোহ হয়। ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বিরসা মুণ্ডার নেতৃত্বে ব্যাপক আদিবাসি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এর নাম ছিল উলগুলান। ১২৮ বছর ধরে থেমে থেমে থেকে থেকে চলতে থাকে আদিবাসি বিদ্রোহ ঝাড়খন্ডের আদিবাসিদের স্বাধীন হওয়ার চেতনাকেই উসকে দিয়েছে। ইংরেজরা বলপূর্বক বিদ্রোহ দমন করলেও স্বাধীনতা পাওয়ার স্বপ্ন আদিবাসিরা বরাবরই দেখে এসেছে। এখনো দেখে।