Flickr Gallery

Friday, March 2, 2012

সংবাদমাধ্যমটি কি কিষেনজি হয়ে গেল?



আজ রাজ্যপাল সাংবাদিকদের বললেন, ‘এক সময়ে রাজ্যটা নিরাপদ ছিল’. অর্থাৎ এখন রাজ্যে বিপদ এসেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই. রাজ্যপাল না বললেও মানুষ ভাবতে শুরু করে দিয়েছে এই রাজ্যের আপদ কবে বিদায় হবে. যদিও রাজ্যপালের কথার বিশেষ ভরসা রাখা ঠিক নয়. তিনিও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব. সাংবাদিক প্রহৃত হচ্ছে। এই কথা প্রসঙ্গে তিনি এক ফাঁকে বললেন, সাংবাদিকরা মার খাচ্ছে, আবার সাংবাদিকরা আমাদেরও মারছে. ‘আমাদের’ বলতে তিনি কি রাজ্যপালদের কথা বললেন? নাকি রাজনৈতিকদের কথা বললেন?

গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি সংবাদপত্র ক্রমাগত সরকার বিরোধী খবর প্রকাশ করে চলেছে. তাই দেখে সরকারের নাজেহাল অবস্থা. রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুযোগ পেলেই বিশেষ একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের কড়া ভাষায় জবাব দিচ্ছেন. দেখে শুনে যা বুঝছি, তাতে মনে হচ্ছে আপাতত বন্ধুবিরহ হয়েছে. কয়েকদিন আগে তিনি বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অসত্য সংবাদের জবাব দেবে জনতা. যাদবপুরের গাঙ্গুলিবাগানে বিরোধীপক্ষের দলীয় অফিসের সামনে সাংবাদিকরা একটি ‘অসত্য’ সংবাদ প্রকাশ্যে আনতে গিয়ে তার জবাব পেয়ে গেছেন. 

সংবাদমাধ্যমটি চক্রান্তের গোঁড়া থেকেই সবকিছু জানে. মাধ্যমটি কিছুদিন আগে পর্যন্ত সব কিছুতেই চক্রান্ত খুঁজে পেত. তাদেরও সবকিছুকেই সাজানো ঘটনা মনে হত. তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর এইসব মাধ্যমে আসতনা. নন্দীগ্রাম তার একটি ছোট্ট উদাহরণ। নন্দীগ্রামকে ফন্দিগ্রাম তৈরি করতে বিশেষ মাধ্যমটিও খুব খাটাখাটনি করেছিল. কিষেনজি আজ আর নেই. সুবিধেবাদের রাজনীতির একটি সিঁড়ি টপকে আসার পর কিষেনজিকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে. এইবার এই মাধ্যমটিকে কি ছেঁটে ফেলার চেষ্টা চলছে? মাত্র নয় মাসের মধ্যেই কি সংবাদপত্রটিকে ‘কিষেনজি’ বানিয়ে দিতে চাইছেন? সংবাদমাধ্যমকে গুলি করে মারা যায়না. সাংবাদিকদের মারলেও সংবাদপত্র মরেনা. অনেকের মনে হতেই পারে মাধ্যমটি তুমুলভাবে সরকার বিরোধী হয়ে গেছে. কিন্তু সংবাদমাধ্যমটিকে বিশ্বাস করলে ভুল হবে. বাদবিবাদ একটি সাজানো ঘটনা. এটি একটি চক্রান্ত. 

কিছুদিন আগেই বিচারপতি তপেন সেন তাঁর আসনে বসেই মন্তব্য করেছিলেন ‘রাজ্য জ্বলছে’. তার একদিন পর রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মন্তব্য করলেন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার তেমন কোন অবনতি হয়নি. মনে হয়ে বিচারপতির তীক্ষ্ণ মন্তব্যকে সামাল দিতেই তিনি এই কথা বলেছিলেন. সাতদিন পর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি সম্বন্ধে তাঁর মন্তব্য কি কোন রাজনৈতিক ইঙ্গিত বহন করছে? সাংবিধানিক ব্যক্তিত্বরা যখন মন্তব্য করেন তখন সেই মন্তব্যের গুরুত্ব কম নয়. তবে রাজ্যপাল কয়েকদিন আগেই আইন শৃঙ্খলার অবনতি না দেখতে পেলেও হঠাৎ রাজ্য যে নিরাপদ নেই বুঝতে পারলেন কি করে? 

সাংবিধানিক ব্যক্তিত্বরা কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকদিনের সরকার বিরোধী খবর পড়েই এইরকম মন্তব্য করেছেন. ফন্দিগ্রাম বা নন্দীগ্রামের সময় এইসব মাধ্যমগুলি অনেককিছু তাদের মাধ্যমে প্রকাশ করেনি বলে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে অনেকদিন রাজভবন অন্ধকার করে বসে থেকে কষ্টে সময় কাটাতে হত. সংবাদমাধ্যম জনমত গড়তে সাহায্য করে. শুধুমাত্র সংবাদ পড়েই রাজ্যের মানুষ বিপদ আপদ নিয়ে মন্তব্য করে. কিন্তু রাজ্যপালের সাতদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভিন্ন মন্তব্য সংবাদপত্রের সরকার বিরোধী প্রচারের ফল বললে ভুল হবেনা. 

অশনি সংকেত অনেকদিন আগেই দেখা যাচ্ছিল. প্রায় সব সংবাদমাধ্যম তখন বিভিন্নভাবে মিথ্যে খবর রটিয়ে নিজেরা একেকজন ‘জনসাধারণের কমিটি’ হয়ে গিয়েছিল. কিষেনজি এক কালে বলতেন, রাজ্যে মমতা শাসক হয়ে এলে তিনি খুশি হবেন, কারণ জনগণের তাতে নাকি মঙ্গল হবে. মমতা এসেছেন. সংবাদমাধ্যমের একাংশ পরিবর্তনের স্বাদ চেখে দেখার জন্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খুব দৌড়েছিল তখন. পরিবর্তনের চক্রান্তে তারাও সাহায্য করেছে. এখন কেঁদে কি লাভ আছে? সংবাদমাধ্যমগুলি নিজেদের বাণিজ্য নিয়ে চিন্তিত থাকে. মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল বেশি হলে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পায়. রাজ্যে নৈরাজ্য এসে গেছে. আলুর গোদাম পুড়লে গল্পের গোপাল ভাঁড় পোড়া আলু খেতে পেয়ে খুশি হত। রাজ্য জ্বলছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলি খুশিই আছে. সংবাদমাধ্যমটি তাদের চক্রান্তে সফলতা অর্জন করেছে। ব্যাবসা বেড়ে গেছে.
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM