Flickr Gallery

Monday, January 23, 2012

তৃণমূলের সর্বনাশ মানে সিপিআইএম-এর পৌষমাস নয়


সাত আট মাস মাত্র হয়েছে সরকার পরিবর্তনের। সবাইকে আশ্চর্য করে বর্তমান সরকার শুধু ফাঁকা বুলি কপচানো ছাড়া বেশি কিছু করতে পারেনি। কিন্তু কিছু করতে পারেনি বলে যতটা ক্ষতি হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে সিপিআইএম-এর। এমন কথা শুনে লোকে লেখককে পাগল বলতেই পারে। তা পাগলই বলুক আর মূর্খই বলুক লেখকের মন যা চায় লেখক তাই লেখে। তাই আবার বলছি তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের জেরে আদতে ক্ষতি হবে সিপিআইএম-এর। তার সঙ্গে অবশ্যই মানুষের ক্ষতি হবে।

নায়িকাসর্বস্ব একটি রাজনৈতিক দলের যাত্রা পালার সবে প্রথম বছরের পৌষমাস কেটেছে। সর্বনাশ দেখার বাকি আছে। এখানে অধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকাল পশ্চিমবঙ্গে একটি কথা খুব বেশি করে চাউড় হয়েছে, ‘একটাই পোস্ট, বাকি সবাই ল্যাম্পপোস্ট’। শাসক দলের মন্ত্রীরা কারণে অকারণে নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে অযথা মমতা ভজনা করছেন। তাঁরা মমতাময়ীর আঁচল ছেড়ে কোনভাবেই স্বাধীন হয়ে বেরোতে পারছেন না এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশে অক্ষমতা দেখাচ্ছেন সে সব দেখে যদি মানুষ বাকি মন্ত্রীদের ‘ল্যাম্পপোস্ট’ বলেন তবে খারাপ কিছু বলছেন না। তবুও মনে হচ্ছে ল্যাম্পপোস্ট বলা ঠিক হচ্ছেনা। কারণ ল্যাম্পপোস্ট সোজা ও দৃঢ় হয়। নিজের পায়েই দাঁড়িয়ে থাকে। এই ল্যাম্পপোস্টগুলি মানুষের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা অধিনায়িকার চোখ রাঙানির ভয়ে ন্যূব্জ। এইসব ‘ল্যাম্পপোস্ট’এর কোন কাজ নেই।তাই পশ্চিমবঙ্গের ইদানীং কোন উন্নয়নমূলক কাজ চোখে পড়ছেনা। ‘ল্যাম্পপোস্ট’ চুপচাপ।
‘রেগা’র কাজ কমে গেছে। যা কাজ হয়েছে তার মধ্যেও মহিলাদের অংশগ্রহণ জাতীয় গড়ের নিচে চলে গেছে। অথচ অধিনায়িকা নিজের দাঁত আর নখ দিয়ে ৯০ ‘সেন্টিগ্রেড’ মাটি খুঁড়ে ফেলেছেন! কথা ছিল, সরকার গঠনের পর সিঙ্গুরের গাড়ি কারখানার জমি ‘অনিচ্ছুক’দের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। হঠকারিতার ওপর ভর করে একটা সরকারি ‘অর্ডিন্যান্স’ও বেরোল। কিন্তু বাধা দিচ্ছে টাটা। আদালতের চৌকাঠে ঠোক্কর খেতে খেতে সিঙ্গুরের ‘তে ফসলি’ জমি আচট হয়ে গেছে। ওই জমিতে এখন ন্যানোর ভূত ঘোরাফেরা করে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গেই শিল্প আসতে পারছেনা। জমি জোগাড় করতে পারা যাচ্ছেনা। শিল্প নেই। কিন্তু শিল্প এবং কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিতে কিন্তু একটুও ভাঁটা পড়েনি। প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।
শিশুমৃত্যু বেড়ে চলেছে। অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হচ্ছে কোথাও কোথাও। অধিনায়িকাই এই বিভাগের একটি ‘ল্যাম্পপোস্ট’। সুস্থ সবল শিশু মারা গেলে হয়তো তাঁর টনক নড়ানো যেত। কারণ যে সব শিশু মারা যাচ্ছে তাদের সবাই অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছে। নায়িকার মতে, অসুস্থ শিশু মারা যেতেই পারে! অসুস্থ শিশুমৃত্যুর দায় রাজ্য সরকার কি করে নেবে! তাই শিশুমৃত্যুর দায় এখনকার রাজ্য সরকারের নেই। কৃষকরা নাকি ব্যক্তিগত কারণেই আত্মহত্যা করে চলেছেন। সরকার দায়বদ্ধ নয়। রোজই প্রায় একজন করে কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করছেন। ধানের দাম পাওয়া যায়নি। তারও আগে পাটে লোকসান। এখন আলুতেও অনেকের লোকসান। পুরোন আলু হিমঘর থেকে বের করতে যত পয়সা লাগবে তার আদ্ধেক দামেও আলু বিক্রি করা যাচ্ছেনা। সরকারের এই বিষয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই। ল্যাম্পপোস্টগুলি ঘুমিয়ে আছে। মায়ের কোল শূন্য হচ্ছে। মাটিতে চোখের জল ফেলে চলেছে মানুষ।
রিষড়ায় সিপিআইএম-এর হুগলি জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ ওই দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বললেন, আমরা সত্যিই ভাবিনি, মাত্র সাত আট মাসেই এমন হাল করে দেবে এই সরকার। তিনি কিছু কর্তব্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রথমত, যে মানুষ ভুল বুঝেছেন, তাদের কাছে গিয়ে তাঁদের আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজেদের যা ভুল ত্রুটি বিচ্যুতি, তা স্বীকার ও চিহ্নিত করে শোধরাতে হবে নিজেদেরই। তৃতীয়ত, পার্টির অবাঞ্ছিত ঝোঁক দূর করতে হবে। চতুর্থত, কমিউনিস্ট পার্টিকে মানুষ যেভাবে দেখতে চান, সেইভাবেই নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।
তাই আমি বলছি, সিপিআইএম দলটির লোকসান হতে পারে। কারণ যেসব সুবিধেবাদী লোকেরা এই দলটিতে আগাছা ও পরগাছার মতো দীর্ঘদিন আটকে আছে তারা রাজ্যের এমন খাস্তা হাল দেখে নির্জীব হয়ে বসে থাকবে কয়েক বছর। বেনোজলের সঙ্গে খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে ভরসা করবেনা। তারাও বুঝতে পারছে যে বর্তমান সরকার রাজ্যটির সর্বনাশ করে দিলে লাভ হবে আগাছাগুলির। মানুষ এইসব আগাছা পরগাছা দেখেই দলটির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন। অনেক মানুষ ওপর মহলের দলীয় নেতাদের সাদামাটা জীবনশৈলী খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাননি। তাই একজন আদর্শ কমিউনিস্ট কেমন হতে পারেন তার ধারণা আগাছা দেখেই তৈরি হয়েছে। মানুষ অসংখ্য আগাছাকে চোখের সামনে মহীরুহ হয়ে যেতে দেখেছেন। মানুষ তাই এত রাগ করেছেন। আগাছাগুলি ঘাপটি মেরে বসে এখন আশায় বুক বাঁধবে। ‘বর্ষার জল’এর অপেক্ষা করবে। তৃণমূলের সর্বনাশ মানে তাদের পৌষমাস হয়ে যাবে আবার। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসন চলতে থাকলে আবার পরগাছা পরিষ্কার হওয়ার আগেই সিপিআইএম-কে ফিরে আসতে হতে পারে। এর ফলে আদতে লোকসান হবে সিপিআইএম-এর। লোকসান হবে মানুষের। লোকসান হবে পশ্চিমবঙ্গের এবং ভারতবর্ষের বামপন্থী আন্দোলনের। 

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM