Flickr Gallery

Monday, January 16, 2012

চলো গড্ডলিকায় তুমি আর আমি ভেসে বেড়াই



সরকার পরিবর্তনের প্রায় আট মাসের মধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর এবং তার আমলারা পরিবর্তনের জোয়ারে ঢলে পড়লেন। দিনের দিন রাজ্যে অশান্তি বাড়ছে। কৃষকদের দেনার দায়ে আত্মহত্যা এ রাজ্যে নতুন বিষয়। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি সরিয়ে দিতে গুন্ডামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের মন্ত্রীরা সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে কথায় কথায় ‘ফন্দীগ্রাম’ দেখাচ্ছে। জোট সরকারের শরিকি কোলাহল তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছে। মানুষ বিপদে পড়ছে। কিছু গরীব মানুষ এর মধ্যেই যাঁতাকলে পড়ে গেছে। নীতিহীন দলের সরকারের খামখেয়ালিপনার মাশুল গুনতে হবে এ রাজ্যেরই মানুষকে। এই সুযোগে সরকারি আমলারা এবং আরও অনেকে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছেন।

হতদরিদ্র তোতি তাঁতি তাঁর স্ত্রী এবং সদ্যোজাত দুই সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়লেন। চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে তিনি তাঁর স্ত্রী ঊষা দেবীকে নিয়ে যান। প্রসূতি কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি। তারপর তিনি তাঁর স্ত্রী এবং নবজাতকদের নিয়ে শম্ভুনাথ হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছোন। কিন্তু ওখানেও ভর্তি করা যায়নি। প্রবল শীতের মধ্যে বারবার হাসপাতাল বদলের ধকল সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ ঊষা দেবীর মৃত্যু হয় রাস্তায়। গরীব মানুষের জ্বালা অনেক। পরিবর্তনের প্রবাহে খড়কুটোর মতো হয়ে ভেসে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকছেনা। হাসপাতালগুলির মানবিকতার অবনতির জন্যে দায়ী বর্তমান সরকার এবং দায়ী সরকারী আমলাদের গাফিলতি।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে দু’দিন আগে তানিশ ফতিমা নামের এক মহিলার সদ্যোজাত শিশুটি চুরি হয়ে গেল। চোর ধরা পড়েনি। যদিও সিসিটিভি’তে ধরা পড়েছে চোর। কিন্তু রাজ্যের পুলিশের কাছে সেই মহিলা চোর এখনো অধরা থেকে গেছে। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে নিরাপত্তায় গাফিলতির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিস - দুতরফের নিরাপত্তাই ঢিলেঢালা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে রিপোর্টে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছে সরকার। বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ও পুলিস ভাল করেই জানে যাই হোক দোষ যাবে রাজনৈতিক একটি দলের ঘাড়ে। তাই নিরাপদেই থাকা যাবে। অতএব গড্ডলিকা প্রবাহে খানিকটা ভেসে নেওয়া যাক।

রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা প্রসূতি ও শিশুচুরির ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়ে আগামী বছরগুলিতে তাঁরা কেমন ভাবে চলতে চাইছেন জানিয়ে দিলেন। বর্তমান সরকার যেমন যে কোন অঘটনের জন্যে তার বিরোধী দলের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে তেমনি সরকারি আমলারা মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া রপ্ত করতে চেষ্টা করে শুরু করেছেন। কোন তদন্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না-করেই এদিন সমস্ত দায় অস্বীকার করে স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন দফতরের কর্তারা। সরকারে আসীন রাজনৈতিক দলটির মতো আমলারাও অন্যের ওপর আক্রমণ হানার পদ্ধতি রপ্ত করছেন এখন। এই পদ্ধতি নৈরাজ্যের রাস্তা প্রশস্ত করবে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে অনেকেই আনন্দে থাকবেন। স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের উপস্থিতিতেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সমস্ত দায় অস্বীকার করে স্বাস্থ্যকর্তারা একটি নতুন বার্তা দিলেন মানুষকে।

দুই প্রসূতির আত্মীয়দের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করে দায় সারলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। শিশুচুরি আটকানো সম্ভব নয় বলে আরও কিছু শিশুচোরকে সজাগ করে রাখলেন তাঁরা। তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেয়েই শিশুচোরকে শিশুর জননীর নিকটাত্মীয় বলে দিলেন অধিকর্তারা। একজন অধিকর্তা বলে দিলেন ঊষাদেবীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। অন্য একজন পাশে বসেই বললেন ঊষাদেবীকে হাসপাতালে আনাই হয়নি। আত্মীয়রা মিথ্যে কথা বলছেন। মানুষের একটু অন্য ধরণের চিন্তার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। যে রাজনৈতিক দলটি সরকার চালাচ্ছে তাদের ইশারায় মানুষের সম্বন্ধে এইরকম ছেলেমানুষি করলেন কি কর্তারা! গরীব মানুষ বলেই কি বিষয়টি মিথ্যে দিয়ে ঢেকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হল?

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থার বেসামাল হতে খুব বেশি সময় নেই বলেই মনে হচ্ছে। ততদিন গড্ডলিকা প্রবাহে সবাই গা ভাসিয়ে নিক। সরকার তার বিরোধী দলেও ওপর দোষ চাপিয়ে খুশি থাক। সরকারী আমলারা মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে আনন্দে থাকুন।

(এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত চোর ধরা পড়েনি। লেখাটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর জানা গেছে যে শিশুচোর ধরা পড়েছে)
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM