পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কি ‘বিবি’ থেকে ‘বাবু’ হয়ে গেলেন? ব্যাকরণের ভুল। তিনি 'বিবি' না। তাঁকে লোকে দিদি বলে ডাকেন। তিনি আজকাল তাঁর ভাষা আর সংযত রাখতে চেষ্টা করছেন না। তাঁর একটি জেদ আছে। তাঁর বিপক্ষ যদি বলে এই কাজটি ভুল হয়েছে, তবে তিনি ঐ কাজটি আবার এবং বারবার করে বোঝাতে চান যে ঐ কাজটি ঠিক ছিল। জোট শরিক কংগ্রেস দিনের দিন তাঁর বিপক্ষ হয়ে উঠছে। কংগ্রেস বলছে ভাষা সংযত করতে তাই তিনি আরো অসংযত হয়ে আরো জেদী হয়ে উঠছেন।
এখন মমতা যেখানেই তাঁর সমালোচনা শুনছেন সেখানেই গালমন্দ করে দিয়ে আসছেন। স্বৈরাচারীদের মতো হুমকি দিয়ে আসছেন। তাঁর দলের লোক এবং তাঁর বিভিন্ন উপসংগঠনের দুষ্কৃতীরা মিলেমিশে যাকে তাকে যখন তখন ধমকে আসছে। যাকে তাকে পিটিয়ে দিচ্ছে। এসবের পেছনে মমতার প্রশ্রয় রয়েছে বলেই সম্ভব হচ্ছে। মমতার দলে তাঁর ইশারা ছাড়া কেউ ট্যাঁ ফু করতে পারেনা। সেই দলের ছাত্র সংগঠন দিনের পর দিন শিক্ষক পিটিয়ে চলেছে আর অশালীনতার সব মাত্রা পার করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। নৈরাজ্যের দিকে জোর কদমে এগিয়ে চলেছে রাজ্য।
মমতার জোট শরিক কংগ্রেসের একটি অংশ মমতার সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে। কংগ্রেস তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই মমতার সমালোচনা করছে। কংগ্রেসের প্রতি মমতার তাচ্ছিল্যের জবাবে মহাকরণে দাঁড়িয়েই মমতার দলকে সাবধান করে মমতাকে সংযত হয়ে বলেছেন রাজ্যের পরিষদীয় দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী। মমতার জেদ সাংঘাতিক। তিনি তাই স্বভাববশত এই সব সমালোচনার পেছনে সিপিএমের হাত দেখে নিয়েছেন। এবং সবাইকে অবাক করে পুনরায় কুৎসিত মন্তব্য করেছেন। যে সব সংবাদমাধ্যম তাঁর সরকারের সমালোচনা শুরু করেছে মমতা তাদের পেছনেও সিপিএমের হাত খুঁজে পেয়েছেন।
তবে সব সমালোচনার মাত্রা ছাড়িয়ে তিনি ছাড়া বাকি সবাইকে কুকুর বলে দেওয়াতে রাজনৈতিক বাজার গরম তেমন হলনা। কারণ কয়েকটি দল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলে বলছে, কুকুর বলেছে তোমাকে, তোমার জোট শরিক তোমাকে কুকুর বলেছে। তোমার ‘ম্যাও’ তুমি সামলাও। তিনি একটি ‘বাংলা প্রবাদ’এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন ‘বাবু চলে বাজার তো কুত্তা ভৌঁকে হাজার’। যদিও এটি বাংলা প্রবাদ নয়। এটি হিন্দির বিখ্যাত প্রবাদ। সমালোচনার জেরে যখন কেউ প্রমাদ গুণতে শুরু করেন তখন সেই ঝড় সামলানোর জন্যে হিন্দিতে বলেন ‘হাতি চলে বাজার তো কুত্তা ভৌঁকে হাজার’।
মমতাবাবু কাজের চাপে বাংলা ভাষাও ভুলতে বসেছেন। মমতাবাবু নিজেকে হাতির সঙ্গে তুলনা করতে সাহস করেননি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর ‘ট্রেড মার্ক’ হাতি। মমতাবাবু তাঁর তুলনা মায়াবতীর সঙ্গে করলে হিতে বিপরীত হতে পারত। মায়াবতীর নাম শুনে দুর্নীতির ভূত জনসমক্ষেই ঘুরঘুর করত। তাই নিজেকে ‘বাবু’ বলে হাতির চাপটি কমিয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া মমতাবাবু কিছুদিন আগেই নিজেকে বাঘের বাচ্চা বলে রেখেছেন। বাঘের বাচ্চা বলে দেওয়ার কয়েকদিন পর নিজেকে হাতি বলে ফেললে অন্য রকম সন্দেহ হতে পারত। আসলে তিনি নিজে কি! এই নিয়েই সংশয় হতে পারত। তিনি অন্যের সম্বন্ধে যাই বলুন না কেন, নিজেকে তিনি দাম্ভিক বলে সবসময়ই প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন। তাঁর দাম্ভিকতার দাপট তাঁকে ঝাপটা মেরে মাটিতে ফেললে আশ্চর্য হওয়ার কোন অবকাশ থাকবেনা।
মমতাবাবুর পেছনে ঘেউ ঘেউ আর ভেউ ভেউ কারা করে? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে মমতাবাবু থাকেন একদম সামনের সারিতে। তার পেছনে বিভিন্ন রকম কুচকাওয়াজ সহযোগে তাঁর দলীয় সমর্থকরা চলতে থাকেন। মমতা হয়তো তাঁদেরই ‘কুত্তা’ বলে দিলেন। কারণ তিনি ‘বাজার’এ নামলেই ‘জিন্দাবাদ’ যারা বলেন তাই হয়তো তাঁর কানে কুকুরের ডাকের মতো বাজতে থাকে। যদিও কংগ্রেস জোঁকের মতো গদি কামড়ে পড়ে থেকে নিজের পরিচয় আগেই দিয়ে রেখেছে। কংগ্রেসকে ‘কুত্তা’ না বলে তিনি যদি ‘লাভের গুড়ের পিঁপড়ে’ বলতেন তবে হয়ত মন্দ হতনা। কুকুর তার বাবুকে দেখে কোনদিন ঘেউ ঘেউ করে না। আগন্তুক দেখে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। বাংলার রাজনীতিতে আর মহাকরণে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছে এখন একদঙ্গল আগন্তুকের। তাই দেখে অনেক কুকুর সমস্বরে চেঁচিয়ে মানুষকে সজাগ করে চলেছে। ধূমকেতুর মতোই তাদের প্রস্থানের জন্যে দিন গুণছেন মানুষ। মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী কুকুর। অনেকে তো নিজের ছেলে মেয়েকে কুকুরের ভরসায় রেখে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ান। তাই কুকুর কোন গালাগালি নয়। কুকুরই মানুষকে সচেতন করে রাখে। কুকুর মানুষের পাহারাদার। মমতাবাবু যাদের কুকুর বললেন তারা সত্যিই কুকুর। শুধু দেখতে হবে কুকুরের জাত। রাস্তার লোভী নেড়ি কুকুর নাকি বিশ্বস্ত শিকারী ও পাহারাদার গ্রে হাউন্ড।