ছত্রধরের মাথায় ছাতা |
কমিটির পর কমিটি। সমিতির পর সমিতি। কিছু লোক শাড়ি পরে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আর তার পেছনে বন্দুকবাজ। হৃদয়ে মমতা। মাথায় তৃণভোজী বুদ্ধিজীবিদের কুবুদ্ধি। আর দেশি বিদেশি টাকা। এর নাম নন্দীগ্রাম ষড়যন্ত্র। এর নাম লালগঢ়। একেই বলে সিঙ্গুর। এর নাম বাংলায় পরিবর্তন। পরিবর্তন এসেছে বাংলায়। মানুষ যা চেয়েছিলেন তাই পেয়েছেন। মানুষ এখন নিশ্চয়ই খুশি রয়েছেন।
যে সব বুদ্ধিজীবিরা সুনিয়োজিত ও পরিকল্পিতভাবে জনসাধারণের কমিটি বা মাওবাদীদের সামনে সারির কিছু শাড়ি পরিহিতা লোকেদের কমিটির সঙ্গে মিলে কিছু বন্দুকবাজ লোকের জন্যে কৌঁসুলি করে এলেন, তাঁরা আজ কই? যারা পিসিপিএর প্রধান লালমোহন টুডুর জন্যে মিছিল করলেন তাঁরা আজ কই? শশধর, ছত্রধর অসিত মাহাতো ও আরও অনেকের সঙ্গে বহুবার যারা মিটিং করলেন তাঁরা আজ কই? প্রমাণ দিয়ে আমার প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। তাঁরা সবাই আছেন। বহাল তবিয়তেই আছেন। ক্ষমতার অলিন্দের আনাচে কানাচে তাঁরা ঘোরাঘুরি করছেন। কারণ এই সার্কাসের রিং লিডারের হাতেই এখন ক্ষমতা। আজাদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করলেন সবাই আর মাওবাদী নেতা আজাদের জন্যে মরাকান্না কেঁদে বাজার মাত করলেন যাঁরা তাঁদের আজ চোখে জল নেই কেন? কিষেণজিকে মাওবাদী ওপর মহল চাইছিলনা বলেই কি সবাই চুপচাপ? আমার প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। হতে পারে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা গণপতি তাঁর শুঁড় গলিয়েছেন বাংলায়। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন তিনিও দেখেন।
তৃণভোজী বুদ্ধিজীবিদের মাথায় ছিল মমতার ছাতা। এখন রয়েছে ক্ষমতার ছাতা। যাদের টিকিতে টান পড়লেই আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন মমতা এখনও সেই আগুন হাতে নিয়ে তার ওপর ছাই চাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। আগুন নিয়ে খেলার কথাটি তিনি ভোলেননি হয়তো। তলায় তলায় আরও বড় ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু একজন কিষেণজির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লাফালাফি করলে ছাইচাপা আগুন আবার দপ করে জ্বলে উঠতে পারে। বাংলার শাসক দলের সাংসদ কবীর সুমনকে সামনে রেখে তাকে দিয়ে তাঁরই দলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করিয়ে আগুনের ওপর ধামা চাপিয়ে রাখা হচ্ছে। আগুন জ্বলুক। কিন্তু কেউ যেন দেখতে না পায়! তাই ধামা পোড়ার জন্যে অপেক্ষা তো করতেই হবে। শাসকদলের পেছনে ধামাধরা তৃণজীবিদের বিষদন্তের গোঁড়ায় আরও খানিকটা বিষ জমে উঠুক।
তৃণভোজী কুবুদ্ধিজীবিদের কি বাকশক্তি হারিয়েছে! নাকি মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে কেউ! নাকি মুখে টাকার বান্ডিল ঠুসে দিয়েছে বর্তমান সরকারের রিং লিডার! এখন প্রতিটি তৃণভোজী তাঁদের চরম তাঁবেদারির পরিচয় দিয়ে পুরস্কৃত হয়ে পরমানন্দে লীলায় মগ্ন। মনে হয় তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে রাখা হয়নি। তাঁরা মনে হয় বাংলার উঠোনে দাঁত দিয়ে টাকার থলি ধরে দু হাত দিয়ে দু কান ধরে এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছেন। ধুধু রোদ্দুরে লালগঢ় হয়ে পায়ে হেঁটে হরিহরপুর পাথরভাঙা পৌঁছোতে যাঁদের পায়ে ফোসকা পড়েছিল তাঁদের পায়ের পাতায় এখনও মমতার মলম দিয়ে চিকিৎসা চলছে। তারাই এখন বাংলার পরিবর্তিত রাজনীতির বিবাহবাসরের নিমন্ত্রিত বরযাত্রী।
ছত্রধরদের ওপর তৃণভোজীদের ছাতা। তৃণভোজীদের ওপর ছত্রধারিণীর মমতা। যাদের ইচ্ছে হয় রোজ সকালে সুখনিদ্রা ভঙ্গ করে পাঁচজন বামপন্থীর লাশ দেখার তাদের জীবন ও চেতনা অন্য পাঁচজন জীবন্ত বামপন্থীর কলমের কষাঘাতে কালিমালিপ্ত হোক। মানুষের চৈতন্যে টান পড়ুক। মানুষ তার চেতনা ফিরে পাক।
রাজনীতি বড় নোংরা ব্যাপার। যদি কিছু তৃণভোজীদের হাতে তা ঘোরাঘুরি করে। রাজনীতি বড় নোংরা কাজ যদি তা মিথ্যের ওপর আশ্রিত হয়ে যায়। বুদ্ধিজীবিদের উচিত কুবুদ্ধিজীবিদের ঘৃণ্যকৃত্যের সমালোচনা করে আগুনকে ধামার নিচে চাপা ছাইয়ের মধ্যে থেকে উসকে দেওয়া। বাংলায় আগুন জ্বলুক। যাদের টিকি ধরে টানাটানি হয়নি এখন তাদের চৈতন্য ধরে টানাটানি শুরু হোক। দাঁতে টাকার বান্ডিলের থলি কামড়ে যেসব তৃণভোজীরা এখন অর্থভোজী হয়েছেন তাঁদের স্বরূপ প্রকাশ্যে আসুক। চৈতন্য যাদের ফিরছেনা তারা প্রত্যেকদিন বামপন্থী রক্তে রাঙা হয়ে উঠুক। লড়াই চলুক।