Flickr Gallery

Thursday, January 26, 2012

আমাদের সাধারণতন্ত্রে তান্ত্রিক গোলযোগ


গতকাল সকালে রাঁচিতে ঝাড়খন্ডের হাইকোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন চা খেতে খেতে আজকে আমাদের ছুটিতে কি কি করব তার একটা খসড়া তৈরি করছিলাম. আমি মুখ ফসকে বলে দিলাম “কাল তো প্রজাতন্ত্র দিবস”. তাই শুনে সুব্রতদা আরও দু তিনজন সঙ্গীকে সাক্ষী রেখে বললেন, “প্রজাতন্ত্র দিবস বলছিস কেন? এটা তো গণতন্ত্র দিবস”. অনির্বাণদা এক গাল হেসে তাঁর তাৎক্ষণিক মন্তব্য করলেন, “হে হে, প্রজাতন্ত্রই বটে, এখনও আমাদের দেশে রাজারা রাজত্ব করে. রাজতন্ত্র থাকলেই প্রজাতন্ত্র থাকবে. তাই আগামীকাল প্রজাতন্ত্র দিবস বললেও ক্ষতি কোথায়!” আমরা তিনজনেই প্রবাসী বাঙালি. আমরা ২৬শে জানুয়ারিকে গণতন্ত্র দিবস বলি. আমাদের শব্দ ভান্ডারে প্রজাতন্ত্র কথাটি বিলুপ্ত.

রিপাবলিক ডে’র অনেক রকম ডাক নাম আছে. কেউ বলে গণতন্ত্র. কেউ বলে প্রজাতন্ত্র. কেউ বলে সাধারণতন্ত্র. যে যাই বলুক না কেন, দেশের তন্ত্র মানে সিস্টেমের একটি সিস্টেমেটিক অর্থাৎ তান্ত্রিক (?) গোলযোগ প্রকট হয়ে উঠেছে. কোন টেলিভিশনের শো’রুমের পাশে থাকা মুটে মজুররা কাজের ফাঁকে সময় পেলে দু’দন্ড উঁকি মেরে দেখতে চাইবে ব্যাপারটা কি! লাইন দিয়ে মিছিল করে যখন রাষ্ট্রের শৌর্য্যের প্রদর্শন হবে ততক্ষণে ব্যাপারটা অনেকের কাছে একঘেয়ে হয়ে গেছে. এই দেশেরই অর্ধেকের বেশি মানুষ তান্ত্রিক গোলযোগের প্রভাবে বুঝতেই পারবেনা আজকের দিনটি কেন পালন করা হচ্ছে.

আজকের এই দিনে আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধান জনসমক্ষে এসেছিল. তৈরি হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান। চারটি তার স্তম্ভ. ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়, যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ এবং সংসদীয় গণতন্ত্র. তান্ত্রিক গন্ডগোল হচ্ছে বলে চারটি স্তম্ভেই ছাতা ধরেছে. কোন স্তম্ভই এখন আর তত উজ্জ্বল মনে হয় না. ধর্ম নিয়ে লড়ে যাচ্ছে মানুষ. তার্কিক লড়াই হলে তাও বলা যেত আমরা সাংবিধানিক. কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে খুনোখুনি. সংবিধানের পাতার মধ্যে দিয়ে দেখলে বোঝা যায় ধার্মিকরাই বিধর্মী হয়ে পড়ছে. মৌলবাদ সংবিধানের মাথার ওপর প্রলয় নৃত্য করতে চেষ্টা করছে. পরিকাঠামোগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের মধ্যেও বিচ্ছিন্নতাবাদের ধুনো জুগিয়ে চলেছে অনেকে. সংসদীয় গণতন্ত্রের মন্দির অর্থাৎ সংসদে রাজাদের আধিক্য থেকেই গেছে. সাংসদরা ভোট আর ভোটের সঙ্গে লোক কেনা বেচা করেই সংসদে ঢোকার রাস্তা প্রশস্ত করছেন. সংসদে সাংসদরা সময়ে সময়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন. আমাদের রাষ্ট্রে তান্ত্রিক গন্ডগোল দেখা দিলেও যান্ত্রিক ভাবে রাষ্ট্র এখনও অখন্ড। গড়গড়িয়ে গড়িয়ে আমরা পেরিয়ে এলাম ষাট বছর. 

তবে সামাজিক ন্যায়ের কথা বলা আজকাল অন্যায়. তন্ত্র এবং যন্ত্র এই স্তম্ভটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে চাইছে. শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করেই আমাদের রাষ্ট্রে পুঁজি খাটানো যাচ্ছে. আমাদের রাষ্ট্রের শাসকরা এমন কিছু সওদাগরকে রাষ্ট্রে ব্যাবসা করতে সুযোগ করে দিয়েছে যারা অনেক অনেক রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি সম্পদশালী. শাসক আর সওদাগর মিলে একটি অসীম শক্তিশালী জোট তৈরি করেছে। এই জোট চাইছে সামাজিক ন্যায়ের নিয়ম কানুনের সাংবিধানিক খোলনলচে বদলে দিতে। এরা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর হামলা করছে. এরা সামাজিক সঞ্চয়ের ওপর হামলে পড়েছে। সাংবিধানিক পরিকাঠামো বদলে ফেলতে এরা এখন উদ্যোগ নিচ্ছে.

তাই দেশের অধিকাংশ মানুষ আজ থেকে আর এক মাস পরে একটি দিবস পালন করতে এখন থেকে তোড়জোর শুরু করেছে. সংবিধান রক্ষা করতে তারাই সেদিন গর্জে উঠবে. সারা ভারত কাঁপিয়ে সেদিন শাসক আর তাদের কিছু বন্ধু সওদাগরদের বিরুদ্ধে সেদিন দেশের বেশিরভাগ শ্রমিক ও কর্মচারী রাস্তায় নামবে. স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান ভেঙে ফেলতে যারা আজ দিল্লিতে বাজনদারদের দিয়ে ভেঁপু বাজাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সেদিন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে স্লোগান উঠবে. স্বাধীন রাষ্ট্র ভারতবর্ষ. এই রাষ্ট্রের সংবিধান ভাঙার চেষ্টা আটকাতে ২৮শে ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ দিবস। অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সেদিন অন্য একরকম প্যারেড চোখে পড়বে. সামাজিক ন্যায় রক্ষার আওয়াজ তুলে সেদিন অন্যরকমের ভেঁপু বাজবে. আজ যে রাজারা প্রজাতন্ত্র দিবসে ফুর্তি করছে প্রজাদের কাছে তা দৃষ্টিকটু. সেদিন সাধারণ মানুষ যে দিবসটি পালন করতে চলেছে তাও অনেক রাজাদের কাছে দৃষ্টিকটু হতে বাধ্য. সংবিধান রক্ষার লড়াই লড়তে আজকের সাধারণতন্ত্র দিবসে সাধারণ মানুষ শপথ গ্রহণ করে ২৮শে ফেব্রুয়ারি শিল্প ধর্মঘট করতে বাধ্য হচ্ছে.
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM