আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে একটা সার্টিফিকেট দিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’জ ডিভাইডার ইন চিফ’ বাংলা করলে যার মানে দাঁড়াল ভারত ভাগের নাটের গুরু। কভার স্টোরিতে আশঙ্কা জানিয়ে বলা হয়েছে মোদিকে কি আরও পাঁচ বছর সহ্য করা যাবে! যদিও কর্পোরেট ম্যাগাজিনের ওপর আমার শ্রদ্ধা কম। কিন্তু এই খবরটা আমার মনের মতো হয়েছে।
২০১২ সালে এই কর্পোরেট ম্যাগাজিনে বেরিয়েছিল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর কভার ফটো। নরেন্দ্র মোদিকে বলা হয়েছিল, ‘মোদি মিনস বিজনেস’ অর্থাৎ মোদি মানেই উদ্যম। তার নীচে 'ইতি গজ' কায়দায় লেখা ছিল 'বাট ক্যান হি লিড ইন্ডিয়া'। নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে এই সার্টিফিকেট মোদিজি সযত্নে রেখে দিয়েছেন। ২০১৫ সালেও এই কর্পোরেট সাপ্তাহিকীতে প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউকে কভার ফটো বানিয়েছিল। তার ক্যাপশন ছিল, ‘হোয়াই মোদি ম্যাটার্স’ অর্থাৎ কেন মোদি?
২০১৫ সালের সেই সংখ্যাতেই ইন্টারভিউ-এর ওপর ভিত্তি করে একটা কভার স্টোরি ছিল। মোদি কিভাবে ভারত বদলাতে চাইছেন সে বিষয়ে বেশ কয়েক পাতা ভরানো লেখা। তাতে ছিল মোদির মিশন আর ভিশন। ছিল গুজরাট মডেল। ওতে ছোট্ট করে ছিল গোধরা কান্ড এবং গুজরাট দাঙ্গার খবর। তাতে ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’-এর কথা বলা হয়েছিল। তাতে ‘আচ্ছে দিন’ ছিল। ওখানে আমরা পড়েছি তিনি তিন ঘন্টা ঘুমোন। তিনি চা বেচতেন। তাঁর মা বাসন মাজার কাজ করতেন। আমেরিকাকে ‘ন্যাচারাল অ্যালাইজ’ তিনি সেখানেই প্রথম বলেন।
এই কর্পোরেট ম্যাগাজিন-এ ভারতের ইনস্যুরেন্স সেক্টরকে বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্যে মোদিজির ভিশনের কথা বলা হয়েছিল। বিশ্বায়নের যুগে কিছু বলিষ্ঠ ভারতীয় ব্যাঙ্ক’কে ব্যক্তিগত মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার ওপরেও তাতে বিদেশি অর্থনীতিবিদদের মতামত দেওয়া হয়েছিল। কর্পোরেটরা মহানন্দে ছিল। টাকা লোফালুফির স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল সবাই। জমি লোফালুফির কথাও সেদিন ওরা বলেছিল। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চাই ইন্ডাস্ট্রি। আর ইন্ডাস্ট্রি বসাতে চাই জমি। মোদিজির জমি অধিগ্রহণ নীতির কথা উঠেছিল। এই নীতির সরলীকরণের স্বপ্নে বিভোর ছিল কর্পোরেট। তবে ওরা সেদিন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল লোকসভার বহুমত আর রাজ্যসভার দুর্বলতা নিয়ে। ‘রিফর্মস’ এখানেই হোঁচট খেয়েছিল সেদিন।
অন্যদিকে এইসব পরিকল্পনা রুখে দিতে কৃষক আন্দোলন তীব্র মাত্রা পেয়েছে। ব্যাঙ্ক ও বীমা কর্মচারীরা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। শ্রমিক আর কৃষক ঘন ঘন দিল্লি কুচ করছে। স্বপ্ন ভেঙে এখন চুরমার।
২০১৯-এর নির্বাচন চলাকালীন অশনি সংকেত আন্দাজ করে ফেলেছে কর্পোরেটরা। এবার তাদের চাই নতুন নেতা। এবার চাই নতুন একটা পরিকল্পনা। মোদিজির ‘আচ্ছে দিন’ এখন তারা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে নতুনভাবে সুদিনের স্বপ্ন দেখছে।
সোজাসাপ্টা কথায় ক্ষমতার শীর্ষে যাওয়ার জন্যে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির যে সিঁড়ি বিজেপি তৈরি করেছিল তা এখন সরিয়ে নিতে চাইছে বিশ্লেষকরা। যদিও ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সিঁড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করেছে এই কর্পোরেট ম্যাগাজিন। সুযোগসন্ধানী কর্পোরেটরা এখন নিজেদের জন্যে আরেকটা সিঁড়ি খুঁজছে। পুরোন বেলুনে ছুঁচ ফুটিয়ে ফুটো করে দিতে চাইছে। ওদের নতুন একটা বেলুন চাই। ওদের নতুন একটা সিঁড়ি চাই। ওদের অনেক অনেক টাকা চাই। ওদের পুরো ভারত চাই।
কান্ডারি তুমি সাবধান কবে হবে? কান্ডারি তুমি হুঁশিয়ারি কবে দেবে? কান্ডারি তুমি কি শুধু পটে লেখা ছবি? কান্ডারি তুমি কি শুধুই একটি নির্মম কবি?