সকালে উঠে দাঁত মাজার আগে আমার অপছন্দের লোকেদের নিয়ে ইশারায় দু’খানা ফেসবুক পোস্ট আমার বরাদ্দ। এই কাজটা না করলে আমার সুখ কম পড়ে। রাতের বেলায় প্রধানমন্ত্রী লেবেলের কাউকে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতো কলাম না লিখলে পেটটা বড় গুড়গুড় করে। অসুখ বাড়ে। অনেকে আবার সেলফি তুলেই সুখী। কেউ সেলফি পোস্ট করলে সুখী। আমি ট্রেনে চেপে যতক্ষণ না পুলিশকে লুকিয়ে গেটের ধারে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট খেতে পারি ততক্ষণ সুখী হতে পারিনা। সুখের অসুখ সব মানুষেরই কম বেশি লেগেই থাকে।
বাঙালির আবার কাঠিতেই সুখ। বিহারিদের ছাতুতে। পাঞ্জাবিরা দুধে। তামিলনাড়ু তেঁতুলে সুখী। বয়স্ক মানুষ বাতের ওষুধ খেয়ে সুখী। মাতালরা পেগ-এ। হজমি গুলির সুখ পেটরোগা মানুষ হলে বুঝতে পারবেন। কেউ কালিপুজোর সময়ে কুকুরের লেজে ফুলঝুরি বেঁধে সুখ পায়। কেউ কেউ হাত ছেড়ে সাইকেল চালিয়ে সুখী। লিস্টটা কিন্তু অনেক লম্বা হয়ে যেত। এখানে থামিয়ে দিয়ে আমি সুখী।
ভারত কিন্তু এখন অসুখী। বিশ্ব সুখ সূচকের একবছরে ৭ অঙ্ক নিচে নেমে এখন বিশ্বের সুখ বাজারে ভারতের স্থান ১৪০তম। এই ব্যাপারে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে অনেক ওপরে। ওরা আছে ৬৭তম স্থানে। অর্থাৎ আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ সুখী। এই শুনে ভারতীয়দের অসুখ আরও বেড়ে যাবে। পরের বছর হয়তো ১৫৬তম স্থানে চলে যাব আমরা। এর নিচে আর নামা যাবে না। কারণ এর চেয়ে বেশি দেশের সমীক্ষা হয়না। তাতেই আমরা সুখী হয়ে যাব। কারণ আর তো নিচে নামার সম্ভাবনা থাকলনা।
সুখ ব্যাপারটা খুব গোলমেলে। কেউ ঘুষ দিয়ে সুখে থাকে, আবার কেউ ঘুষ খেয়ে। কেউ পান্তাভাত খেয়ে সুখী আবার কেউ বিরিয়ানি খেয়েও অসুখী। তবে মন্দির "ওঁহি" বানাতে পারলে ভারতের অসুখ কেটে যাবে। সুখের ছুঁচ উর্ধ্বমুখী হবে। সবাই সুখী হয়ে যাবে।
আজ বিশ্ব সুখ দিবস। এই দিনটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০১১ সালের ২০শে মার্চ। প্রতিষ্ঠাতার নাম জেমি ইলিয়েন। মাদার টেরিজার চ্যারিটি মিশন তাঁকে কলকাতার রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পায়। পরে তাঁকে আন্না বেলি ইলিয়েন নামের এক মার্কিন মহিলা দত্তক নিয়ে নেন। জেমি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘ইকনমিস্টস ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
জেমির কলকাতা লিঙ্ক জানলে অবশ্যই বাংলার মানুষ সুখী হতে পারবেন।