Flickr Gallery

Wednesday, September 2, 2015

কাজ না করলেই বোম মারব


১২ দফা দাবি নিয়ে ১১টি শ্রমিক সংগঠনের ২ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটের ফলে সারা ভারতে একদিনে ২৫০০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হলেও পশ্চিমবঙ্গে এক টাকারও ক্ষতি করতে পারলনা সিপিএম। সকাল থেকেই বাস চলল। ট্রাম চলল। পাবলিক পোঁ পাঁ দৌড়ে অফিস গেল। অন্য দিনের চেয়ে বেশি কর্মচারী সরকারি অফিসে হাজিরা দিল। অন্য দিন ৯১ হলে এদিন ছিল ৯৩। গ্রামের দিকে ছিল ৯৭। এই ধর্মঘটের ফলে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত রাজ্য সরকারের কর্ম সংস্কৃতি যাকে বলে বন্যার জলের মতো হুড়হুড় করে ফিরে এল। টেবিলে মাথা গুঁজে দিনভর যা কর্ম সংস্কৃতি দেখা গেল তাতে কিছু না হলে ফ্যাস করে এক লাফে জিডিপি ৩ পয়েন্ট বেড়ে গেল।
বন্ধও হল। ধর্মঘট হল। ধর্মঘটীরা রাস্তায়। ধর্মঘট ভাঙার জন্যে বাঁশ হাতে কর্ম সংস্কৃতি ফেরানোর সুপুরি নেওয়া ষন্ডা ষন্ডা জনা শয়েক লোক শহর দাপিয়ে বেড়াল। কোথাও বোম মেরে কর্ম সংস্কৃতি ফেরানোর চেষ্টা হল। কোথাও গোলাগুলি। কোথাও মার কাটারি। তার ওপর আবার পুলিশের বীরত্ব। এমনিতে এই সব কর্ম সংস্কারকরা যখন বাঁশ হাতে থানা চড়াও হয় তখন পুলিশ টেবিলের তলায় মাথাটুকু ঢুকিয়ে পেছন দিকটা অসভ্যের মতো আকাশের দিকে উঁচু করে অর্থাৎ পশ্চাৎদেশ ঊর্ধমুখী করে ঊর্ধপশ্চাদাশনের ভঙ্গিতে ঘন্টার পর ঘন্টা অবলীলায় কাটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই ছাপোষা কেরানি আর কুলি মজুরের ধর্মঘটে বীরত্ব দেখাল। পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখানোর মতো ব্যাপার। একদিকে সেই বাঁশধারী। অন্যদিকে উর্দিধারী। প্যাঁদানির নাম ধনঞ্জয়। শালা কাজে যাবিনা মানে। বাংলায় কর্ম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। মার শালাকে। বোম মার। জ্বালিয়ে দে শালা।

ভাঙচুরও হল। মদের দোকান কেন বন্ধ? পেটে একটু না পড়লে কর্ম সংস্কৃতি ফেরানোর শক্তি পাওয়া যাবে কি করে। এই শালা দোকান খোল। বাংলায় বন্ধকে সাপোট করতে দোবনা। দে শালা কুড়িটা পাঁইট। মদের দোকান বন্ধ মানে উৎসব বন্ধ। উৎসব বন্ধ হলে মোচ্ছবও বন্ধ। মোচ্ছব বন্ধ হলে কর্ম সংস্কৃতি ফিরবে কি করে। এইসব কর্ম সংস্কৃতি ফেরানোর সুপুরি নেওয়া বাঁশধারী, বোমধারীরা এক মিনিটে সাফ করার সুপুরি নিয়ে গোটা একদিন ধরেও ধর্মঘটীদের টলাতে পারলন। তারা কাজে গেলনা। তারা রাস্তা থেকেও নড়লনা। তারা মাটিতে পড়ে মার খেয়েও মরলনা। তাদের শক্তিটাই আলাদা। তারা মদ খেলনা। তারা মোচ্ছব করলনা। তারা ধর্মঘট করল। তারা বাঁশ বোমের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে সেই লাল পতাকা নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েই থাকল। মানুষ ওদের সেই শক্তি দেখে কেঁপে গেল। বোমধারী শাসকের শাসন ভূভারতে মানুষ শেষ কবে দেখেছে ভুলে গেছে। পায়ে পা লাগিয়ে শাসকের বাঁশ হাতে যে ভাবে শ্রমিকদের শাসন করল এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বিরোধীদের। এতটাই সংযম রেখে তারাও যেন বন্ধের দিনে কর্ম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।
তবে রাজ্যের কিন্তু সারা ভারতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেল। এই বাঁশধারী কর্মবীরদের চাক্ষুষ করে পাবলিক কিন্তু রাজ্য সরকারকে একটু সন্দেহের চোখে দেখছে। সন্দেহের ফলে অবিশ্বাস জন্মাতে পারে। তার প্রভাব ভোটবাক্সেও পড়তে পারে। আর সেই প্রভাব যদি ভোটবাক্সে পড়ে তবে তো পাবলিকের আরও ক্ষতি। আবার কেঁচে গন্ডুষ। মানে বিধি বাম। পাবলিক পড়েছে এবার যাঁতাকলে। মূল রাখি না হুল রাখি। কূল তো কবেই গেছে। তাই তো ২৫০০০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি নস্যি। এই রাজ্যের সততা প্রতীকের ওপর বাঁশের ছাপ লেগে ব্যাপারটা কেরোসিন হয়ে গেল।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM