Flickr Gallery

Tuesday, September 4, 2012

ডেঙ্গুর মশা মারতে কামান না দাগলেও চলত



কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ ডেঙ্গু মারতে কামান দাগার কল্পনা করে বলেছেন, সেনাবাহিনী নামিয়েও ডেঙ্গুর থেকে পরিত্রাণ নেই। অর্থাৎ কামান দেগেও মশা মারা যাবেনা। আবার মুখ্যমন্ত্রীর গোলমেলে হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা মাত্র তিন। রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজে স্বঘোষিত বৈজ্ঞানিকের মতো একটি ডেঙ্গু তত্ত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ডেঙ্গু প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়। অর্থাৎ ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গরমের মতোই ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু ব্যাপারটাও প্রাকৃতিক! এর অর্থ হল, ঝড়-বৃষ্টি হলে তা ঠেকানো সরকারের যেমন কাজ নয়। তেমনি ডেঙ্গু ঠেকানো সরকারের কাজ নয়। ফিরহাদের এইধরণের ‘বিশেষ অজ্ঞ’ মন্তব্যে শহরের মানুষের মনে আতঙ্ক বেড়েছে।

সরকারের নানা মুনির নানা মতের মধ্যে আরেকটা মত বলছে, কম বৃষ্টি হওয়ার জন্যেই ডেঙ্গু সংক্রমণের মশা বাড়ছে। তিন মিনিটের বৃষ্টিতেই শহরের অনেক ‘পকেটে’ জল জমে যাচ্ছে। আর তাতেই নাকি ডেঙ্গুর মশা এসে ডিম পেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এইসব ‘মুনি’কে কে বোঝাতে যাবে বেশি বৃষ্টি হলে কি ওই পকেটগুলি শুকনো থাকবে! 'পকেট'-এর জমা জল ধুয়ে গেলে মশার লার্ভাও ধুয়ে বেরিয়ে যাবে, কিন্ত  এমন অনেক অনেক 'পকেট' আছে যেমন ডাবের খোলা, পুরোন টায়ার, অব্যবহৃত জলের ট্যাঙ্ক, ইত্যাদি। এইসব জায়গায় মশারা তো আবার ডিম পাড়তে পারে। বৃষ্টি কি সবসময়ে হয়ে চলবে? ভবিতব্যের হাতে মশাকে না ছেড়ে দিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের মশাদমনে দক্ষতা দেখাতে হবে। কলকাতার তাপমাত্রা মশার বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত আবহাওয়া। অনেক জায়গায় গরমে যত মশা দেখা যায়। তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মশা শীতকালেই কলকাতার আকাশে ঘুরে বেড়ায়। পোকাবিদের একটি দল বলছে শহরে নতুন ধরণের এক মশার আবির্ভাব হয়েছে। এই মশা ১২০০ দিন বেঁচে থাকতে পারে! এই শহরেই আজ আবার মুখ্যমন্ত্রী ডেঙ্গু নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলবেন। দেখা যাক এই অদ্ভুত মশা নিয়ে তিনি কিছু বলেন কিনা! 

সরকারপক্ষের অনেকে এখনো নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন। কলকাতার মহানাগরিক শোভন চ্যাটার্জি বলছেন, শহরে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধের চিত্র সন্তোষজনক। কিছুদিন আগে পৌরসভার অধিবেশনে তৃণমূলী প্রশাসকরা এক বাক্যে রায় দিয়েছিলেন শহরে ডেঙ্গু সংক্রমণ নেই। তথ্য গোপনেরও অভিযোগ উঠছে। সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে ব্যাপক ফারাক দেখা যাচ্ছে। সরকার বলছে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা তিন। বেসরকারি তথ্য বলছে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২১ এবং সংক্রমিত হয়ে আছেন কয়েক হাজার মানুষ। এই তথ্যের গরমিল ঢাকতে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য তৃণমূলী বিধায়ক নির্মল মাজি মশা নিয়ে রাজনীতি করছেন। তিনি বলেছেন, কর্পোরেট সংস্থাগুলি ডেঙ্গু নিয়ে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্যেই মৃতের সংখ্যা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে। 

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে। সরকারের এই ধরণের বিশেষজ্ঞ মন্তব্য শুনে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। নাগরিকদের একাংশের মন্তব্য, ডেঙ্গুর দায় এড়াতেই সরকারপক্ষ এমন কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে চলেছে। মশা নিয়ন্ত্রণের বদলে সরকারপক্ষ থেকে কামান দাগা হচ্ছে। কখনো বিরোধীদের বিরুদ্ধে। কখনো শরিক দলের বিরুদ্ধে। আবার কখনো কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে। মশা নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যে মশানাশক তেল ছড়ানো, পরিবেশের স্বচ্ছতা এবং নাগরিকদের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা এবং সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকুশলতাই যথেষ্ট। মশা মারতে কামান না দাগলেও চলত।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM