Flickr Gallery

Thursday, March 29, 2012

তাঁবেদারির জবাব নাই। তাঁবেদারিতেই বাঁচতে চাই



আজ একটি খবরের কাগজে বছর খানেক আগের একটি রচনা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। প্রয়াত সাংবাদিক বরুণ দত্তের লেখা একটি রচনা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে লেখা হয়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুখ ফসকে একটি সংবাদপত্রের মিথ্যে রচনাবলীর বিরোধিতা করতে গিয়ে বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্যের উপস্থাপনা করেছিলেন। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিক মহাশয় নিজেকে ‘ছুঁচো’র সঙ্গে তুলনা করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে বলেছিলেন ‘সাহস’ থাকলে গায়ে হাত দিয়ে দেখুন। অর্থাৎ উসকানিমূলক কথা বলে তিনি ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় না পাওয়ার জয়ঢাক পিটিয়ে ছিলেন। অথচ সেই আমলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গালমন্দ শুনেও সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দেওয়ার ফতোয়া জারি করেননি।

কয়েকদিন আগে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারগুলি থেকে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই সব বাদ পড়া সংবাদপত্র আবার তালিকাভূক্ত হয়ে যেতে পারে। অচল সংবাদপত্রগুলিকে গ্রন্থাগারে চালান করে এবং সচল সংবাদপত্রগুলিকে গ্রন্থাগার থেকে বাদ দিয়ে সরকার কি করতে চাইছে তা কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। অনেকে বলছেন স্বৈরাচারী শাসকরা নাকি এমন বেনিয়মের পাগলামি অহরহ করে থাকেন। প্রাক্তন সরকারকে তাদের শত্রুসকল স্বৈরাচারী বলতেন। কিন্তু এইরকম বেনিয়মি কাজকর্মের কোন উদাহরণ দিতে পারতেন না। 

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রচনাটির প্রসঙ্গ উত্থাপন করা যাক। 

ব্যাঙের লাথি বলে একটা কথা বাংলায় চালু আছে। আমার মতো অতি সাধারণ ব্লগ লেখকের লেখা পড়ে অনেকে তাই বলেন শুনেছি। প্রয়াত সাংবাদিকের রচনার ভাষায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্নরকম কুরুচিকর ‘পদবী’ পড়তে পড়তে মনে হল, ব্যাঙের লাথি মারার প্রকোপ মনে হয়ে তখন বেড়ে গিয়েছিল। কথায় আছে, সময় খারাপ এলে ব্যাঙেরও লাথি খেতে হয়। তখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সময় খারাপ ছিল। কিন্তু সেই ‘ব্যাঙের লাথি’র রচনাটি সংবাদপত্রটিতে আবার প্রকাশিত হল কেন? এখন তো বামেদের সময় খারাপ নয়! ৩৪ বছরের রাজ্যপাট চালানোর পর বিরোধি আসনে বসে মুক্ত তারা। রাজ্যপাট চালানোর ‘হ্যাপা’ থেকে কয়েকবছরের জন্যে ছুটি। যদি কেউ রাজ্য চালানোকে সুদিন বলেন তবে ভুল হবে। রাজ্য চালানো মানে মানুষের সেবা করা। অর্থাৎ মানুষের পক্ষ নিয়ে জনসেবার চাকরি করা। কে না চায় চাকরি থেকে কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে মুক্ত হতে! 

নজর রাখলে বোঝা যায় যে কিছু সংবাদপত্র অপশাসনের রাজত্বে জোর করে পুরোন প্রসঙ্গ টেনে এনে বোঝাতে চাইছে ‘পরিবর্তন’ হয়নি। যেমন বর্ধমানের বাম বিধায়ক খুন হয়ে যাওয়ার পর একটি গণমাধ্যম বলল, আগেও এমন হয়েছে। মানে পরিবর্তন হয়নি। কোথায় হয়েছে? অন্য কোন দলের বিধায়ককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে কি? এসব উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা বৃথা। সংবাদমাধ্যমগুলি ভাবে, মানুষ ঘাসে মুখ দিয়ে চলেন। ওদের যা বোঝানো হবে ওরা তাই বুঝবেন। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলে চলেছে, দলতন্ত্রের পরিবর্তন হয়নি। মানুষকে বোঝাতে চাইছে, আগেও এরকমই হত। তাই এ আর নতুন কথা কি! গ্রন্থাগারে এর আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কখনো কোন খবরের কাগজকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়নি। যদিও শ্রমিক আন্দোলনের জেরে একটি সংবাদপত্র প্রায় দুমাস বন্ধ ছিল। কিন্তু সরকারি আদেশ জারি করে সংবাদপত্রকে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। সেই প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে এখন। কে বোঝাবে শ্রমিক সংগঠন সরকার চালাত না। আদালতের আদেশ পেয়ে সরকারের পুলিশ পরে গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়েছে। তাহলে সরকারের দোষ কোথায়? 

আজ আরেকটি সংবাদপত্রে রক্তদান শিবিরে রক্তদাতাদের হাতে দামী উপহার তুলে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ার একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতেও বামেদের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, আজকাল দামি হাতঘড়ি, দামি স্যুটকেস, চাকা লাগানো ব্যাগ রক্তদাতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বামেরা একটি রক্তদান শিবিরে মাটির রবীন্দ্রমূর্তি রক্তদাতাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এতেই সংবাদপত্রটির মনে হয়েছে ‘বামেরাও পিছিয়ে নেই’ এই ধরণের কার্যকলাপ থেকে। তুলনামূলকভাবে অবশ্যই দামী উপঢৌকনের চেয়ে মাটির রবীন্দ্রমূর্তি অমূল্য। পরিবর্তন হয়েছে এই কথাটি কিছু সংবাদমাধ্যম একেবারে বুঝে উঠতে পারছেনা। বামেদের ভাবমূর্তি কলুষিত করার কাজটি সংবাদমাধ্যমগুলি চাতুর্য্যের সঙ্গে করে চলেছে। 

গ্রন্থাগার থেকে জনৈক প্রয়াত সাংবাদিকের সংবাদপত্রটি বাদ পড়ার পর তাই সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকের রাগ গিয়ে পড়ল প্রাক্তন সরকারের ওপর। যেমন বন্ধুর কাছে চড় থাপ্পড় খেলেও রাগ গিয়ে পড়ে শত্রুর ওপর। তাই প্রয়াত ও প্রখ্যাত সাংবাদিকের রচনা পুনরায় প্রকাশ পেল। চূড়ান্ত বামবিরোধিতা করলে দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারীরা খুশি থাকেন। ভগবান ছাড়া যারা কাউকে ভয় পান না তাঁরা আগেও তাঁবেদারি করেছেন। এখন তাই সংবাদপত্রটির গায়ে হাত পড়লেও ‘দেখে নেব’ মার্কা আস্ফালন না দেখিয়ে পুরোন হুঁশিয়ারি পুনরায় প্রকাশ পায়। যে সরকার গায়ে হাত দিল তাদের ‘দেখে নিতে’ যে সাহসের দরকার তার অভাব রয়েছে। স্বৈরাচারীকে সুবিধাবাদী তাঁবেদাররা ভয় পায়। তাই অনেকে সরকারি বিজ্ঞপ্তির বিরাশি সিক্কার পেল্লাই চড় খেয়েও এখনও তাঁবেদারি করে যাচ্ছেন। বামেদের বিরুদ্ধে সবাই মিলে এখনও লড়ে যাচ্ছেন।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM