Flickr Gallery

Tuesday, November 29, 2011

ন্যাড়া বেলতলায় বসেই আছে


গায়ক যদি রাজনীতিবিদ হয়ে যায় তবে রাজনীতিটাই পুরোপুরি গান হয়ে যায়। আর গানের যদি কোন সোজা উল্টো না থাকে তবে সেই রাজনীতিরও কোন সোজা উল্টো থাকার কথা নয়। অর্থাৎ আপনি উল্টো রাজনীতি করতেই পারেন। বারুদের গন্ধ মিশিয়ে আর তাতে রক্তের রঙ লাগিয়ে গান লিখে তার সঙ্গে বন্দুকের গুলির শব্দের সুর দিয়ে গিটারও বাজাতে পারেন। আপনি সবকিছুই করতে পারেন।

সব মানুষই নিজেকে কেউকেটা ভাবে। সুজন চক্রবর্তীকে যে ভোটে ভট করে হারিয়ে দিল সে কেউকেটা। ব্রাত্য বসুকে যে স্রেফ গিটার বাজিয়ে জিতিয়ে দিল সেও কেউকেটা। মমতা ব্যানার্জি যাকে দলে টানার জন্যে টানা এক বছর সাধাসাধি করেছেন সে নিশ্চয়ই কেউকেটা। যে তৃণমূলের নামে রোজ তিনটে করে কুৎসা বাজারে ছাড়েন আর নির্বিবাদে গিটার বাজান সেও কেউকেটা। নয়তো এত গান বাজিয়ে ন্যাড়া এখনো দলে আছেন কি করে? ন্যাড়াকে কেউটে বললে ভুল হবে। তবে একটা মিল আছে এই কেউকেটা আর কেউটের মধ্যে। কেউটে সাপকে কেউ ঘাঁটায়না। আপনাকেও কেউ তাই ঘাঁটাবেনা। পাঁচখানা সিপিএমের লাশ দেখলে যে খুশি হয় তাকে কামধেনু বলা যায়। যে গরু দুধ দেয় তার লাথিও গোয়ালাকে খেতে হয়। কারণ রাজনীতি যারা করে তাদের চামড়া মোটা রাখতে হয়। তবে পট করে অভিমানী হয়ে ধারাপাতের মতো কেচ্ছা গাইলে কি হয়। জনপ্রতিনিধি না হলে কোন কথা ছিলনা। কিন্তু পাবলিক একজন দায়িত্ববান বীরপুঙ্গব বেছে নিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে। কেন সংসদ ফাটিয়ে দিচ্ছেননা? কেন বলছেননা ওখানে যে আপনি গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে পাতায় পাতায় বেড়ান। সংসদে গলা ফাটিয়ে কেন বলছেননা যে আপনি যাদের সমর্থন করেন তারা সংসদীয় গণতন্ত্রকে মানেনা? কেন বলছেননা যে যাদের সঙ্গে আপনাদের নেতারা আর তৃণজীবি বুদ্ধিজীবিরা মিটিং মিছিল করেছেন তারা কারা? সে বেলায় ন্যাড়ার বেলতলায় যাওয়ার শখ না থাকলেও বেলতলায় বসে থাকতে ভালই লাগে! মুখে কিষেণজির রক্তমাখা জামাটা বেঁধে বসে থাকুন। আর গিটার বাজিয়ে মাতিয়ে রাখুন।
আপনি বারবার বলে চলেছেন মমতার অত সময় নেই। অত কথা মনেও নেই। মমতা বললেন যে উনি চাইলে এক তুড়িতেই আপনি সাফ হয়ে যেতে পারেন। উনি ঠিকই বলেছেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল। ওই দলে আপনার চরমপন্থী দলের মতো গণতন্ত্রের অভাব। এত জেনেও আপনি বেলতলায় গেলেন? আপনার আর দোষ কোথায়? সেই ছবছর বয়সে রথের মেলায় গাড়ি কেনার সময় যেটুকু আপনার ঘটে ছিল সেইটুকুই থেকে গেছে। নাকি একটাকার গাড়ি দুটাকায় কিনতে চাওয়ার গপ্পো থেকে আপনি বোঝাতে চাইছেন যে বেলতলায় বসে মুড়ি মুড়কি খেতে বেজায় ভাল লাগে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে বেলতলায় পৌঁছোনোর পর এত তাড়াতাড়ি কি বেলতলা ছাড়তে ভাল লাগে? পাবলিক একবার যখন বুঝবে খ্যামটা নাচের গায়ক ও নায়ক রাজনীতিতে নাক গলিয়ে পাবলিকের  বারোটা বাজিয়েছে তখন তারাই আর বেলতলায় আপনাকে পাঠানোর মতো ভুল করবেনা। তাই আপনি বেলতলায় বসে গিটার বাজান। পাবলিক শুনুক। এবার আর বেলতলায় যাবনা বলাটা আপনার আহাম্মকি। বাহাদুরি নয়।
মমতাও আপনাকে বোঝেননি আবার আপনিও মমতাকে বোঝেননি। এই কথাটাই ভুল। উনি মিথ্যবাদী হলেও দুঁদে রাজনীতিবিদ। বুঝতে আপনার ভুল হতে পারে। কিষেণজির হত্যার পর আপনার সেই চরমপন্থীদের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্যে কিছু উল্টো গান তো গাইতেই হবে। নইলে কূল রাখা দায় হয়ে যাবে। এই লেখাটা আপনার উদ্দেশ্যে লিখলেও জানিনা আপনি পড়ার সুযোগ পাবেন কিনা। হতে পারে আপনি দল থেকে বহিষ্কৃত হবেন। হতে পারে কালই হবেন। কিংবা আরও কিছুদিন পর হবেন। সেই কান্ড যবেই ঘটুক না কেন আপনি কিন্তু মমতাকে দোষ দিতে পারবেননা। কারণ দুজনেই দুজনকে ভাল ভাবে চেনেন। চরমপন্থীদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগই তো আপনাকে বেলতলায় এনে ফেলল।
কর্তার ইচ্ছেই কর্ম। আপনিই কর্তা। অন্তত নিজের জন্যে আপনি নিজেই কর্তা। কিন্তু কর্ম? জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর নিজের শৌচকর্ম ছাড়াও অনেক রকম কর্ম থাকে। সেই সব কর্ম বাদ দিয়ে শুধু নিজের শৌচকর্ম করার চিন্তা মাথায় এসে গেলে গানের মতোই কথাগুলিও উল্টোপাল্টা বেরিয়ে পড়ে। আসলে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনতার প্রতি যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্যে উল্টো হয়ে হাঁটতে হলে তাই হাঁটব। কিন্তু আমি নিজের শৌচকর্ম ছাড়া কিছু করতে জানিনা। তাই করছি না। করবনা। বেলতলায় না। বেলপাহাড়িতে বেলের বাগান খুঁজে নিয়ে ওখানে গিয়ে বসুন। সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন।

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM